ময়মনসিংহে চিকিৎসা অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ডা. শামীমা হক কাকন: ২০ বছরেও শেষ হয়নি “শেষ পর্ব”

ময়মনসিংহে চিকিৎসা অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ডা. শামীমা হক কাকন: ২০ বছরেও শেষ হয়নি “শেষ পর্ব”
ময়মনসিংহে চিকিৎসা অঙ্গনে সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে আলোচিত নাম ডাক্তার শামীমা হক কাকন। প্রায় দুই দশক ধরে তিনি চিকিৎসা পেশায় যুক্ত, কিন্তু তার এফসিপিএস কোর্সের শেষ পর্ব এখনো সম্পূর্ণ হয়নি। অথচ দীর্ঘদিন ধরে তিনি তার ভিজিটিং কার্ডে নিজের নামের পাশে লিখে আসছেন “শেষ পর্ব”। এতে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন—শেষ পর্ব আসলে কবে শেষ হবে?
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়, ফখরুদ্দিন আহমেদের আমলে তিনি এফসিপিএস কোর্সে ভর্তি হন। সেই থেকে শুরু হয় তার দীর্ঘ চিকিৎসা জীবন। কিন্তু শিক্ষাজীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এখনো অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে।
ময়মনসিংহের ভেনাস হাসপাতালে তিনি বহু বছর ধরে প্র্যাকটিস করছেন। রোগী দেখছেন, অস্ত্রোপচার করছেন, চিকিৎসা দিচ্ছেন। তার স্বামী ডা. মো. শফিকুর রহমানও একজন অভিজ্ঞ সার্জন—এমবিবিএস, এফবিপিএস (সার্জারি) ডিগ্রিধারী এবং ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারিতে উচ্চতর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের সাবেক সহকারী অধ্যাপক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে স্বামী-স্ত্রী মিলে ভেনাস হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
তবে সাম্প্রতিক এক ঘটনার পর আবারও সামনে এসেছে ডা. শামীমা হক কাকনের নাম। এক মায়ের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে শহরজুড়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, সিজারিয়ান অপারেশনকে কেন্দ্র করে চিকিৎসায় অবহেলার কারণেই ওই মা প্রাণ হারান। স্থানীয়দের দাবি—ওই দিন অপারেশনের প্রস্তুতি ও প্রক্রিয়াতেও নানা অনিয়ম লক্ষ্য করা যায়।
লোকমুখে শোনা যাচ্ছে, ঘটনাটির পর প্রভাবশালী মধ্যস্থতায় প্রায় ৫ লক্ষ টাকা দিয়ে বিষয়টি “মীমাংসা” করা হয়েছে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো—একজন মায়ের প্রাণের বিনিময়ে এই অর্থ দিয়ে মীমাংসা কতটা নৈতিক বা গ্রহণযোগ্য?
একজন মা হারিয়ে গেছে—এই ৫ লক্ষ টাকা কি সেই হারানোর ব্যথা মুছে দিতে পারে? সমাজে কি এই ধরনের মীমাংসা স্বাভাবিক হয়ে যাবে?
বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)-এর নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো ডাক্তার অসম্পূর্ণ ডিগ্রি বা কোর্সের নাম তার ভিজিটিং কার্ড, প্রেসক্রিপশন বা সাইনবোর্ডে উল্লেখ করতে পারেন না। শুধুমাত্র সম্পূর্ণ অর্জিত ও বিএমডিসি অনুমোদিত যোগ্যতাগুলোই উল্লেখের অনুমতি রয়েছে। অর্থাৎ “শেষ পর্ব” লিখে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করা নৈতিকতার পরিপন্থী এবং আইনগতভাবেও প্রশ্নবিদ্ধ।
চিকিৎসা নীতিমালা অনুযায়ী, এ ধরনের বিভ্রান্তিকর পরিচয় ব্যবহারকে পেশাগত অসদাচরণ হিসেবে ধরা হয়। প্রমাণিত হলে বিএমডিসি সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের রেজিস্ট্রেশন স্থগিত বা বাতিল পর্যন্ত করতে পারে। কিন্তু দুই দশক পার হলেও এখনো কেন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি—সেটিই এখন নতুন প্রশ্ন।
ভেনাস হাসপাতালের করিডোরে এখন কানাঘুষা—“২০ বছরেও শেষ হয়নি ডাক্তার কাকনের শেষ পর্ব, তাহলে শেষ হবে কবে?” কেউ বলছেন, প্রভাবশালী পরিবারের সম্পর্কই তাকে রক্ষা করে এসেছে এতদিন। আবার কেউ বলছেন, এফসিপিএস কোর্সের প্রক্রিয়াই দীর্ঘ, তবে এত দীর্ঘ—তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করছেন অনেকে।
চিকিৎসা পেশা সমাজের সবচেয়ে সম্মানজনক ও সংবেদনশীল ক্ষেত্র। এখানে প্রতিটি ডিগ্রি ও যোগ্যতা মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িত। তাই এই পেশায় স্বচ্ছতা, সততা ও জবাবদিহিতা অপরিহার্য।
এখন ময়মনসিংহবাসীর মুখে একটাই প্রশ্ন—
ডা. শামীমা হক কাকনের “শেষ পর্ব” কি কখনো শেষ হবে, নাকি এই ‘শেষ পর্ব’ নামের অধ্যায়টিই থেকে যাবে অনন্তকাল ধরে?
চায়ের কাপে, ফেসবুক পোস্টে, এমনকি হাসপাতালের বারান্দাতেও এখন এই প্রশ্নই ঘুরছে।
ভেনাস হাসপাতাল আজ সত্যিই ময়মনসিংহের টক অব দ্য সিটি।
