মোঃ বিল্লাল হোসেন মানিক ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধি।
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় পরিবহন খাতে চাঁদাবাজির দৌরাত্ম্য যেন শেষ হওয়ার নাম নেই। অতীতে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের সময় চাঁদাবাজির একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারকারী মোহাম্মদ সারাফত আলী (পিতা: নইমুদ্দিন, ঠিকানা: পাড়া টুঙ্গি, দলুয়া বিল) এখনো সেই একই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এবার সে কৌশল বদলেছে—পুরনো রাজনৈতিক রং বদলে বিএনপি ও যুবদলের কিছু অসাধু নেতাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে আবারও পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজির রাজত্ব কায়েম করেছে।
বিল্লাল হোসেন সরকার, ইদু, যদু, আরব আলী, মনিরের মতো বিতর্কিত আওয়ামী লীগ নেতাদের ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে পরিচিত সারাফত আলী দীর্ঘদিন ধরে মুক্তাগাছার পরিবহন খাতে চাঁদাবাজির নেতৃত্ব দিয়েছিল। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের মদদে সে তখন অবৈধভাবে অর্থ আদায়, শ্রমিক ও পরিবহন মালিকদের ভয়ভীতি দেখানোসহ নানা অপকর্ম করত। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়।
নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় টিকে থাকতে এবার সে বিএনপি ও যুবদলের কিছু অসাধু নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পরিবহন শ্রমিক ও মালিক অভিযোগ করেছেন, সারাফত আলী এখন বিএনপির প্রভাবশালী কিছু নেতার ছত্রছায়ায় থেকে ঠিক আগের মতোই চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে।
মুক্তাগাছার পরিবহন শ্রমিক ও মালিকরা বলছেন, সারাফত আলী ও তার গডফাদারদের কারণে তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। চাঁদা না দিলে গাড়ি চলতে দেওয়া হয় না, শ্রমিকদের মারধর করা হয়, এমনকি প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
একজন পরিবহন শ্রমিক বলেন, "আমরা খেটে খাওয়া মানুষ, সারাদিন গাড়ি চালিয়ে যা আয় করি, তার বড় একটা অংশ চাঁদা দিতে হয়। না দিলে মারধর করা হয়, গাড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই অবস্থায় আমরা কোথায় যাব?"
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের নাকের ডগায় এই চাঁদাবাজি চললেও এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অনেকে মনে করছেন, রাজনৈতিক প্রভাবের কারণেই সারাফত আলীর মতো চাঁদাবাজরা বারবার রঙ বদলে টিকে যাচ্ছে।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "সরকার পরিবর্তন হলে শুধু দল বদলায়, কিন্তু চাঁদাবাজি বন্ধ হয় না। প্রশাসন যদি চায়, একদিনেই এসব বন্ধ করা সম্ভব। কিন্তু তারা নিরব ভূমিকা পালন করছে!"
মুক্তাগাছার সাধারণ জনগণ, পরিবহন শ্রমিক ও মালিকরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন, দ্রুত সারাফত আলীসহ তার চাঁদাবাজ চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে মুক্তাগাছার পরিবহন সেক্টর এক শ্রেণির চাঁদাবাজদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়বে, যা সাধারণ মানুষের চলাচল ও শ্রমজীবী মানুষের জীবিকাকে আরও কঠিন করে তুলবে।
প্রশাসন কি ব্যবস্থা নেবে, নাকি রাজনৈতিক আশ্রয়ে চাঁদাবাজরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে? মুক্তাগাছার মানুষ এখন সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে।