আব্বাস আলীর দখলবাজি ও জালিয়াতি: জেলা পরিষদের জমি দখল থেকে দারোগার সাথেও প্রতারণা!
Oplus_16908288

আব্বাস আলীর দখলবাজি ও জালিয়াতি: জেলা পরিষদের জমি দখল থেকে দারোগার সাথেও প্রতারণা!
নিজস্ব প্রতিবেদক।
ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার কাকনী ইউনিয়নের ধ্বলি বাজার সংলগ্ন এলাকায় জেলা পরিষদের পুকুর পাড় দখল করে দোকান নির্মাণের ঘটনায় নতুন করে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। প্রভাবশালী সাবেক নেতা আব্বাস আলীর বিরুদ্ধে শুধু দখলবাজির নয়—অভিযোগ উঠেছে জালিয়াতি, ভুয়া দলিল বানানো, এমনকি হত্যা মামলার সাথেও সম্পৃক্ত থাকার।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা পরিষদের মালিকানাধীন ওই পুকুরের পাশে একসময় গরীব ও নিঃস্ব নারী চাকমানী বসবাস করতেন। সেই সময়েই এক তরুণীকে হত্যা করা হয়, যার ঘটনায় ফুলপুর-তারাকান্দা থানায় একটি হত্যা মামলা রেকর্ডভুক্ত হয়। মামলাটি এখনো রেকর্ড রয়েছে। স্থানীয়রা দাবি করেন, ওই সময়ের ঘটনার সঙ্গে আব্বাস আলী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন বলে যানা যায়।
এছাড়া, ২০০২ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের পূর্ববর্তী সরকারের সময় তিনি রোড ডাকাতির সাথেও যুক্ত ছিলেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। এ সময় তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলা পরিষদের পুকুরের একপাশ ভরাট করে আব্বাস আলী নিজ উদ্যোগে দোকানঘর নির্মাণ করেছেন এবং তা ভাড়া দিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ উপার্জন করছেন। অথচ, জেলা পরিষদের অনুমোদন বা লিজ ছাড়াই এই সরকারি সম্পত্তিতে তার অবৈধ দখলদারি অব্যাহত রয়েছে।
দোকান ভাড়া নেওয়া ভাড়াটিয়া বলেন, “আমি প্রায় ১০-১১ বছর ধরে আব্বাস আলীর কাছ থেকে দোকান ভাড়া নিয়েছি। ১৫ হাজার টাকা জামানত দিয়েছি, মাসে ৮৫০ টাকা করে ভাড়া দিই।”
এলাকার সমাজসেবক সুজন জানান,
“আব্বাস আলী শুধু সরকারি জমি দখল করেই থেমে নেই। তার বিরুদ্ধে ভুয়া দলিল তৈরি করে জমি বিক্রি, মানুষকে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, এমনকি সরকারি কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে প্রতারণার অভিযোগও আছে।”
সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ এসেছে ধ্বলি গ্রামের কালু মেম্বারের ছেলে নয়নকে আব্বাস আলী তার পরিবার দারোগার কাছে জাল ভুল দাগ নাম্বারে কাগজপত্র তৈরি করে জমি বিক্রি করেছেন। এতে ২০থেকে ২৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দারোগা নয়ণ। জমির মীমাংসা নিয়ে কেউ কথা বললেই তারা হুমকি দেয়।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,
“আব্বাস আলী আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে এলাকায় দাপট দেখাতো, কেউ প্রতিবাদ করলে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দিত। অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে তার কারণে।
তারাকান্দা উপজেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন,
সরকারি সম্পত্তিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ও দখলের বিষয়টি জেলা প্রশাসক এর বরাবর আজ লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলছে
একজন প্রভাবশালী সাবেক শ্রমিক লীগ নেতা কি এতটাই শক্তিশালী যে, জেলা পরিষদের সম্পত্তি দখল করে, মিথ্যা মামলা দিয়ে, এমনকি পুলিশের নামেও জালিয়াতি করে পার পেয়ে যাচ্ছেন?
এলাকাবাসী বলেন,
আব্বাস আলীর দখলবাজি ও প্রতারণা থেকে এখন আর কেউই নিরাপদ নয়। জেলা পরিষদ থেকে শুরু করে সাধারণ ব্যবসায়ী, এমনকি পুলিশের দারোগার নামও তার জালিয়াতির জালে ব্যবহৃত হচ্ছে।
এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন কি সত্যিই ব্যবস্থা নেবে—নাকি আবারও ক্ষমতার দাপটে ধামাচাপা পড়বে আব্বাস আলীর দখল, প্রতারণা আর ভুয়া নাম্বারের দলিলের এই কাহিনি!
