জামিন পেলেও মুক্তি নেই: ময়মনসিংহ কারাগারে বন্দী নজরুল ইসলামের রহস্যজনক আহত

জামিন পেলেও মুক্তি নেই: ময়মনসিংহ কারাগারে বন্দী নজরুল ইসলামের রহস্যজনক আহত
স্টাফ রিপোর্টার | ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহ জেলা কারাগারে নজরুল ইসলাম নামে এক হাজতির জামিন আদেশ কার্যকর না হওয়ার ঘটনায় নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। আদালত থেকে জামিনের কাগজ পৌঁছানোর পরও তাকে মুক্তি না দিয়ে শারীরিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে তিনি গুরুতর আহত অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
নজরুল ইসলাম আদালত থেকে নিয়মিত জামিন পান। জামিনের কাগজ জেলা কারাগারে পৌঁছালেও মুক্তির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়নি। এ নিয়ে নজরুল ও কারা কর্তৃপক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে কারাগারের ভেতরেই ঘটে যায় মারাত্মক ঘটনা। পরে নজরুলকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়।
অভিযোগের বিষয়ে ডেপুটি জেলার ইমতিয়াজ জাকারিয়া বলেন, “নজরুল নিজেই নিজের মাথা দেয়ালে ঠুকেছে। এতে তার মাথা ফেটে গেছে। আমরা কাউকে মারিনি।”
তবে এই বক্তব্যে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেক কারা কর্মকর্তা ও আইনজীবী। তারা বলছেন, “একজন বন্দী কেন নিজের মাথা নিজেই ফাটাবেন— বিশেষ করে তিনি যখন জামিন পেয়েছেন? বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষ।”
অন্যদিকে অভিযুক্ত নারী কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌস ঘটনার পর থেকে অফিসে অনুপস্থিত আছেন বলে জানা গেছে।
কারা উপ-মহাপরিদর্শক (DIG-Prisons) তৌহিদুল ইসলাম বলেন,
“ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আইনজীবীরা বলছেন, কোনো বন্দী জামিন পাওয়ার পরও যদি যথাসময়ে মুক্তি না পান, তবে এটি দণ্ডবিধির ৩৪১ ও ৩৪২ ধারায় অবৈধ আটক (Wrongful confinement) হিসেবে গণ্য হতে পারে।
তাছাড়া কোনো সরকারি কর্মকর্তার নির্যাতন বা শারীরিক ক্ষতিসাধনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তা দণ্ডবিধির ৩২৩ ও ৩২৫ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
একই সঙ্গে জেল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব হলো আদালতের আদেশ দ্রুত বাস্তবায়ন করা— এতে গাফিলতি করলে তা অবমাননা আদালত (Contempt of Court) হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। প্রশ্ন রয়ে গেল
ঘটনার তদন্ত শুরু হলেও, সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন—
আদালতের জামিন আদেশও যদি নিরাপত্তা দিতে না পারে, তবে বন্দীদের ন্যায়বিচার কোথায়?
