মুক্তাগাছায় পুলিশের চরম ব্যর্থতা: আসামিরা প্রকাশ্যে বেপরোয়া, প্রশাসন নীরব দর্শক

মুক্তাগাছায় পুলিশের চরম ব্যর্থতা: আসামিরা প্রকাশ্যে বেপরোয়া, প্রশাসন নীরব দর্শক
ক্রাইম রিপোর্টার মোঃ বিল্লাল হোসেন মানিক
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থানায় আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি আজ ভয়াবহতম অবস্থায় পৌঁছেছে। সাধারণ মানুষ যখন ন্যায়বিচার আর নিরাপত্তার আশায় পুলিশের দ্বারস্থ হচ্ছে, তখন থানার ওসি সাহেব যেন ক্ষমতাধর আসামিদের রক্ষক হয়ে দাঁড়িয়েছেন। এর স্পষ্ট প্রমাণ আলোচিত মামলা নং–১৪-এর ৫৪ নম্বর আসামি সাইফুল ইসলাম ও ধর্ষণ মামলার আসামি রেজাউল করিম সুজনকে ঘিরে পুলিশের বর্ণনাতীত অবহেলা।
সাইফুল ইসলাম (পিতা: হাসু মুন্সি, বাড়ি: পাইকিয়া সিমলা, পৌরসভা ৬নং ওয়ার্ড), আওয়ামী লীগের সাবেক কমিশনার। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা ঝুলে আছে। অথচ তিনি দিব্যি বুক ফুলিয়ে শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, এমনকি দলীয় লোকজন নিয়ে প্রকাশ্যে গোপন বৈঠক করছেন। সাধারণ মানুষ তার এই দাপট দেখে আতঙ্কিত হলেও পুলিশ নির্বিকার। অভিযোগ উঠেছে—থানার ওসি সাহেবকে একাধিকবার ফোন করে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হলেও তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি। মামলার এডভোকেট নীলা স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, “ওসি সাহেব আসামিকে গ্রেফতারে ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যর্থ হচ্ছেন।”
অন্যদিকে ধর্ষণ মামলার আসামি মোঃ রেজাউল করিম সুজন (পিতা: আব্দুল হামিদ ফকির, সাং–তারাটি চরপাড়া, মুক্তাগাছা) এর বিরুদ্ধে আদালত থেকে লেভী ওয়ারেন্ট ইস্যু হলেও পুলিশ কার্যত ব্যর্থ হয়েছে। এএসআই মোঃ আমির হামজা আসামির বাড়িতে গিয়ে তাকে খুঁজে পাননি। স্থানীয় ইউপি সদস্য ও চৌকিদারের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়—সুজনের নামে কোনো অস্থাবর সম্পত্তিও নেই। ফলে সম্পত্তি ক্রোক করাও সম্ভব হয়নি।
প্রশ্ন হলো—আদালতের নির্দেশ মানতে গিয়েও যদি পুলিশ এমন অসহায়ত্ব দেখায়, তবে জনগণের নিরাপত্তা কোথায়? সাইফুলের মতো বহুমামলার আসামি যখন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায় আর সুজনের মতো ধর্ষণ মামলার আসামি আইনের বাইরে থাকে, তখন এটা আর পুলিশের সীমাবদ্ধতা নয়, বরং চরম গাফিলতি ও দুর্নীতি।
স্থানীয়দের অভিযোগ আরও গুরুতর—ওসি সাহেব বিএনপির নাম টেনে ধোঁয়াশা তৈরি করলেও বাস্তবে টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগের অনেক আসামিকে রেহাই দিচ্ছেন। এর ফলে মুক্তাগাছায় আইনের শাসন কার্যত ভেঙে পড়েছে। নিরীহ মানুষ ন্যায়বিচার বঞ্চিত হচ্ছে, আর ক্ষমতাধর আসামিরা পুলিশের নাকের ডগায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।
মুক্তাগাছার মানুষ আজ ক্ষুব্ধ। তারা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছে—আইনের শাসন কি কেবল গরিব ও অসহায় মানুষের জন্য? থানার ওসির ব্যর্থতা আজ প্রমাণ করেছে, পুলিশ রাজনৈতিক প্রভাব ও টাকার কাছে মাথা নত করে আছে। বারবার সংবাদ হওয়ার পরও একজন আসামি যখন দিনের আলোয় ঘুরে বেড়ায়, তখন বোঝা যায়—প্রশাসনের চোখে আইন কেবলই প্রহসন।
মুক্তাগাছার মানুষ আজ একবাক্যে বলছে—এটি শুধু পুলিশের অবহেলা নয়, এটি পুলিশের চরম লজ্জাজনক ব্যর্থতা।
