কৌশলে ইউরোপে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৬৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ; মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানা

কৌশলে ইউরোপে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৬৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ; মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানা
ঢাকা/ময়মনসিংহ,যৌথ প্রতিনিধি
২৫ জুলাই ২০২৯
ইউরোপে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে ৬৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রাজধানীর খিলগাঁও থানায় একটি প্রতারণা মামলা দায়ের হয়েছে। মামলায় চারজনকে আসামি করা হয়েছে এবং আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেছেন।
মামলাটি খিলগাঁও থানায় CR-১৬৭/২০২৫ নম্বরে নথিভুক্ত হয়েছে। বাদী শেখ মোঃ আল আমিন (৩২), ড্রীম ওয়ার্ল্ড এন্ড ট্র্যাভেলস সার্ভিসের প্রোপ্রাইটর। তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেন, ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ইউরোপে ভিসা ও যাতায়াতের জন্য মোট ২৭ জন যাত্রীর নামে প্রধান আসামী মোঃ স্বপন মিয়াকে ৬৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকা প্রদান করেন। তবে আসামিরা প্রতিশ্রুত ভিসা বা ভ্রমণ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হন এবং টাকা ফেরত না দিয়ে বাদীকে প্রতারণার শিকার করেন।
অঙ্গীকারনামা ও চেক ফেরত
বাদী মামলায় উল্লেখ করেছেন, আসামিরা প্রথমে টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে একটি অঙ্গীকারনামা এবং ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের একটি চেক (নং A2221731, তারিখ: ০৮/০৫/২০২৫) দেন। কিন্তু ব্যাংক জানায়, এজেন্ট ব্যাংকিং লিমিট অতিক্রম করায় চেকটি ক্যাশ করা সম্ভব নয়। পরবর্তীতে চেক বাতিল হয়ে গেলে বাদী সম্পূর্ণ অর্থ হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন।
আসামিদের পরিচয়
১) মোঃ স্বপন মিয়া (৩৪), প্রধান আসামী; পিতা: মোঃ বাদল মিয়া; ঠিকানা: চুরখাই, ময়মনসিংহ।
২) তুষা (প্রায় ২৭), স্বপন মিয়ার স্ত্রী; মামলায় জাল আইডি ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।
৩) মোঃ হান্নাত (২৫), পিতা: মোঃ বাদল মিয়া।
৪) শাহনাজ বেগম (৫০), স্বামী: মোঃ বাদল মিয়া।
বাদীর অভিযোগ অনুযায়ী, স্বপন মিয়া ও তার স্ত্রী তুষা দীর্ঘদিন দেশেই অবস্থান করলেও নিজেদের প্রবাসী পরিচয়ে প্রতারণা করে আসছিলেন। অনলাইনে ছদ্মনামের আইডি (যেমন Lamia Jannat) ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের ফাঁদে ফেলেন।
হুমকি ও প্রতারণার কৌশল
বাদী জানান, ২০২৪ সালের জানুয়ারির পর থেকে আসামিরা তার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। পরে ২০২৪ সালের মার্চে এক শালিশ বৈঠকে আসামিরা টাকা ফেরতের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু এরপরও টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো বাদীকে নানাভাবে হুমকি দেন। ২০২৫ সালের ৭ মার্চ বাদী প্রকাশ্যে টাকা চাইলে আসামিরা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানান এবং প্রাণনাশের হুমকি দেন।
আইনি ধারা ও গ্রেফতারী পরোয়ানা
মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৬ (বিশ্বাসভঙ্গ করে আত্মসাৎ), ৪২০ (প্রতারণা) ও ৫০৬ (হুমকি প্রদান) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। আদালত ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা ৭৫ মোতাবেক চার আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেছেন।
বাদীর দাবি
বাদী শেখ মোঃ আল আমিন আদালতের কাছে প্রতারকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা, আত্মসাৎকৃত টাকা ফেরত এবং ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন। একই সঙ্গে তিনি নিজের পরিবার ও যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনি সহায়তা কামনা করেছেন।
বর্তমান অবস্থা
মামলার সঙ্গে বাদীর দাখিলকৃত অঙ্গীকারনামা, চেক এবং ব্যাংক স্টেটমেন্ট আদালতের নথিতে সংযুক্ত হয়েছে। মামলার পরবর্তী শুনানি ও কার্যক্রম আদালতের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী পরিচালিত হবে।
পাঠকের জন্য নোট: এ প্রতিবেদন বাদীর দাখিলকৃত অভিযোগপত্র ও সংযুক্ত নথির ভিত্তিতে প্রকাশিত। আসামিপক্ষ আদালতে নিজেদের বক্তব্য ও প্রমাণ উপস্থাপনের সুযোগ পাবেন।
