যুক্তরাষ্ট্র ও মালয়েশিয়ায় বেনজীর আহমেদের সম্পদ জব্দ, ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের নির্দেশ

যুক্তরাষ্ট্র ও মালয়েশিয়ায় বেনজীর আহমেদের সম্পদ জব্দ, ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের নির্দেশ
দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে এবার আন্তর্জাতিক সম্পদের দিকে হাত বাড়ালো দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আদালতের নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্র ও মালয়েশিয়ায় থাকা তার সম্পদ ও ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে।
ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক ড. মো. জাকির হোসেন গালিব গত ১০ জুলাই এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আদেশ দেন। ওই আদেশ অনুযায়ী, বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের মালিকানাধীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের বাফেলো ও হ্যামবার্গ এলাকায় অবস্থিত দুটি বাড়ি এবং মালয়েশিয়ার ব্যাংকে থাকা চারটি অ্যাকাউন্ট জব্দ ও ফ্রিজ করা হয়েছে।
দুদক সূত্রে জানা যায়, নিউইয়র্কের ‘২২৭০ জেনিস অ্যাভিনিউ, হ্যামবার্গ’ ও ‘৬০৮ মিনেটো স্ট্রিট, বাফেলো’ ঠিকানার বাড়ি দুটি বেনজীর ও তার স্ত্রীর নামে। এসব সম্পত্তির মূল্য প্রায় ৪ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫ কোটি টাকা।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও মালয়েশিয়ার সিআইএমবি ইসলামিক ব্যাংকের চারটি হিসাব ফ্রিজ করে দেওয়া হয়েছে। ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলোতে বিপুল পরিমাণ অর্থ থাকা সন্দেহ করা হচ্ছে, যা তার ঘোষিত আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
দুদকের আবেদনে বলা হয়, বেনজীর আহমেদ সরকারি চাকরিতে থাকাকালে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন করেছেন এবং সেই সম্পদ তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা বিদেশে পাচার করেছেন। তিনি ও তার স্ত্রী ও সন্তানদের নামে ৯.৪৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক, যার মধ্যে দেশ ও বিদেশ মিলিয়ে ৭৪ কোটিরও বেশি টাকার সম্পত্তি রয়েছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে।
এর আগে, মে মাসে আদালতের আদেশে বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী ও সন্তানদের নামে থাকা দেশে মোট ৮৩টি স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি এবং ৩৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছিল।
দুদক আরও অভিযোগ করেছে, বেনজীর বিভিন্ন সময় তার সম্পত্তি আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু ও ঘনিষ্ঠজনদের নামে হস্তান্তরের চেষ্টা করেছেন, যাতে তদন্তে বাধা সৃষ্টি হয়। তাই এসব বিদেশি সম্পদের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি হয়ে পড়ে।
আন্তর্জাতিকভাবে এই সম্পদ জব্দের জন্য প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক ও আইনগত প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ সরকার ও দুদক। সংশ্লিষ্ট দেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে এবং সম্ভাব্যভাবে ইন্টারপোলের সহায়তাও নেওয়া হতে পারে।
এই বিষয়ে বেনজীর আহমেদের পক্ষে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তার আইনজীবীরা দাবি করছেন, এসব অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং রাজনৈতিকভাবে হয়রানির অংশ।
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রাক্তন পুলিশ প্রধানের বিরুদ্ধে এই ধরণের বিদেশে সম্পদ জব্দের ঘটনা নজিরবিহীন বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এই ঘটনা ভবিষ্যতে সরকারি কর্মকর্তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে একটি দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ হবে।
প্রতিবেদন: কাগজের আলো প্রতিবেদক
সূত্র: দুদক, আদালত, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম
