কেওয়াটখালী সেতু নিয়ে নকশা পরিবর্তন ও দুর্নীতির অভিযোগ: জাতীয় প্রেসক্লাবে সরব ময়মনসিংহবাসী
Oplus_16908288

কেওয়াটখালী সেতু নিয়ে নকশা পরিবর্তন ও দুর্নীতির অভিযোগ: জাতীয় প্রেসক্লাবে সরব ময়মনসিংহবাসী
নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা, ১৩ জুলাই ২০২৫
ময়মনসিংহবাসীর স্বপ্নের কেওয়াটখালী সেতু আজ বিভ্রান্তি ও দুর্নীতির গন্ধে জর্জরিত—এমন অভিযোগ তুলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে নাগরিক সংগঠন ‘সদাজাগ্রত ময়মনসিংহ’ ও ‘ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলন’। শনিবার (১৩ জুলাই) দুপুরে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের প্রধান সংগঠক ও সমন্বয়ক আবুল কালাম আল আজাদ।
তিনি বলেন, “একসময়ের সমৃদ্ধ জনপদ ময়মনসিংহ আজ উন্নয়ন বৈষম্য ও অপরিকল্পিত প্রকল্প বাস্তবায়নের শিকার। শহরটি এখন পৃথিবীর অন্যতম ধীরগতির শহরে পরিণত হয়েছে, যার প্রধান কারণ শম্ভুগঞ্জ চায়না সেতু ঘিরে ভয়াবহ যানজট। এই অবস্থার স্থায়ী সমাধানে বিকল্প সেতু নির্মাণ ময়মনসিংহবাসীর বহুদিনের দাবি ছিল। কিন্তু বর্তমান প্রকল্প বাস্তবায়ন নকশা বহির্ভূত ও জনবিরোধী।”
আবুল কালাম জানান, ২০১৪ সালে ময়মনসিংহ স্ট্র্যাটেজিক ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান (MSDP)-এর আওতায় কেওয়াটখালী এলাকায় একটি দ্বৈত সড়ক ও রেল সেতুর পরিকল্পনা গৃহীত হয়, যা ২০২১ সালের ২৩ আগস্ট একনেক সভায় অনুমোদন পায়। ৩,২৬৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প ২০২৫ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে বর্তমানে মূল নকশা থেকে সরে গিয়ে পুরনো চায়না সেতুর সঙ্গে সংযোগ করে একটি বাঁকা ‘ইংরেজি ইড (D)’ আকৃতির সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে, যা যানজট আরও ভয়াবহ করে তুলবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
নকশা পরিবর্তনের ফলে প্রকল্পের আওতায় ব্যাপক উচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নতুন সংযোগ সড়কের কারণে ইতোমধ্যেই উচ্ছেদ করা হচ্ছে একটি খাল, সাতটি জলাশয়, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মসজিদ ও মাদ্রাসা, প্রায় ৬৫টি কবর এবং বহু দোকানপাট ও ক্ষুদ্র কারখানা। এছাড়াও প্রয়োজন হচ্ছে ৩২ একর অতিরিক্ত জমি অধিগ্রহণ এবং নির্মিত হচ্ছে প্রায় ২ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৩০ ফুট উঁচু সড়ক ও ওভারপাস, যা প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে দেবে ২ থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত।
আবুল কালাম আরও বলেন, “এই অনৈতিক পরিবর্তনের পেছনে কাজ করছে একাধিক আবাসন প্রকল্প ও প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজ চক্র। তারা জনগণের স্বপ্নকে দুঃস্বপ্নে রূপান্তর করছে। এই প্রকল্প এখন উন্নয়নের পরিবর্তে দুর্নীতির প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
তিনি জানান, জনদাবির পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি সরকারের পক্ষ থেকে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ২৫ ও ২৬ জানুয়ারি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করলেও এখনও সেই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি। বরং আন্দোলনকারীদের হুমকি, হামলা ও মিথ্যা মামলার মাধ্যমে দমন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এ অবস্থায় জনগণের পক্ষে হাইকোর্টে একটি রিট মামলা (আবুল কালাম আল আজাদ বনাম বাংলাদেশ সরকার ও অন্যান্য) দায়ের করা হয়। মামলায় ৪ জুন ২০২৫ তারিখে হাইকোর্ট একটি রুল জারি করেন—“কেন নকশা বহির্ভূতভাবে সেতু নির্মাণ বন্ধে নির্দেশ দেওয়া হবে না?”
সংবাদ সম্মেলনে আবুল কালাম বলেন, “আমরা কেওয়াটখালী সেতুর বিপক্ষে নই। বরং দ্রুত এবং সুষ্ঠুভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন হোক—এটাই চাই। তবে একনেক অনুমোদিত নকশা ছাড়া যেভাবে নির্মাণ চলছে, তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। জনস্বার্থের কথা চিন্তা না করে, বাঁকা ডিজাইন আর বিপজ্জনক সংযোগ সড়ক তৈরি করে যানজট আরও তীব্র করা চলবে না।”
সংবাদ সম্মেলনে ময়মনসিংহের বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিসহ সাংবাদিক, শিক্ষক, ব্যবসায়ী ও সচেতন নাগরিকরা উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা বলেন, উন্নয়নের নামে শহরবাসীকে দুর্ভোগে ঠেলে দেওয়া যাবে না। জনগণের স্বপ্ন যেন কিছু গোষ্ঠীর লোভে নষ্ট না হয়—এটাই তাদের মূল দাবি।
