শম্ভুগঞ্জ ইউসি উচ্চ বিদ্যালয়ে দুর্নীতি-অনিয়মে ধস, প্রশ্ন শিক্ষার ভবিষ্যৎ কোথায়
Oplus_16908288

শম্ভুগঞ্জ ইউসি উচ্চ বিদ্যালয়ে দুর্নীতি-অনিয়মে ধস, প্রশ্ন শিক্ষার ভবিষ্যৎ কোথায়
ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শম্ভুগঞ্জ ইউসি উচ্চ বিদ্যালয় আজ চরম অবনতি ও দুর্নীতির কারণে আলোচনার কেন্দ্রে। এক সময় যেখানে শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করত, শিক্ষার মান নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলত না, সেখানে আজ অভিভাবক, ছাত্র ও স্থানীয়রা প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করছেন। একাধিক অভিযোগ ঘুরে ফিরে আসছে—শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ আত্মসাৎ, ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি অবহেলা, প্রধান শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতা এবং সার্বিক অব্যবস্থাপনা।
বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তারা যোগ্যতা নয়, আর্থিক লেনদেন ও পরিচয়ের ভিত্তিতে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন। স্থানীয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি একজন শিক্ষককে নিয়োগ পেতে তিন লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে, যার অডিও রেকর্ড ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
শিক্ষার মানও দিনদিন নেমে যাচ্ছে। বোর্ড পরীক্ষায় একটি বিষয়ে ফেল করলে পরের বছর আবার সব বিষয়ে পরীক্ষা দিতে বাধ্য করা হচ্ছে, এমন এক অদ্ভুত নিয়ম চালু করেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে চরমভাবে ভেঙে পড়তে দেখা গেছে।
অন্যদিকে সরকারি বরাদ্দে উন্নয়ন প্রকল্পের নামে হয়েছে বড় ধরনের অনিয়ম। একইভাবে বেঞ্চ, ব্ল্যাকবোর্ড, ফ্যানসহ অন্যান্য সামগ্রীর কেনাকাটায় ভুয়া বিল দেখিয়ে অর্থ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে।
বিভিন্ন শ্রেণির ছাত্রীদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক তাদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। ফলে অনেক ছাত্রীই এখন বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। বিদ্যালয় চত্বরে বহিরাগতদের অবাধ প্রবেশেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
অভিভাবকদের ভাষ্য, বিদ্যালয় পরিচালনায় স্বচ্ছতা নেই, কোনো সভা হয় না, মতামত নেওয়া হয় না। একজন অভিভাবক বলেন, ‘এই বিদ্যালয়ে আগে ভর্তি করাতে লাইন লাগতো, এখন মানুষ বাচ্চাদের অন্য স্কুলে পাঠিয়ে দিচ্ছে।’
বিভিন্ন সূত্র থেকে আরও জানা যায়, শিক্ষা কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন একাধিকবার অভিযোগ পেয়েও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, যার ফলে দুর্নীতির চক্র আরও বিস্তৃত হয়েছে।
এলাকাবাসীর দাবি, দ্রুত স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রধান শিক্ষকসহ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সবাইকে অপসারণ করতে হবে। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিরাপদ ও ইতিবাচক শিক্ষা পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি।
এই বিদ্যালয় শুধু একটি প্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি এলাকার ভবিষ্যৎ। এই ভবিষ্যৎকে বাঁচাতে প্রয়োজন সঠিক সিদ্ধান্ত ও কঠোর প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ।
