৩নং ফাঁড়ির ইনচার্জ আবুল হোসেনের নেতৃত্বে ইয়াবাবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান | তিন দিনে গ্রেপ্তার ৪, উদ্ধার ২২০ পিস মাদকদ্রব্য!

৩নং ফাঁড়ির ইনচার্জ আবুল হোসেনের নেতৃত্বে ইয়াবাবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান | তিন দিনে গ্রেপ্তার ৪, উদ্ধার ২২০ পিস মাদকদ্রব্য!
ময়মনসিংহ কোতোয়ালী মডেল থানার অধীনস্থ ৩নং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আবুল হোসেনের সুপরিকল্পিত ও জোরালো নেতৃত্বে গত কয়েকদিনে শহরের বিভিন্ন এলাকায় একাধিক মাদকবিরোধী অভিযান চালানো হয়। শহরের আকুয়া, বাদেকল্লা ও চরপাড়া এলাকায় তিনটি পৃথক অভিযানে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিয়ে ৩নং ফাঁড়ির পুলিশ টিম মাদক বিক্রয়ের সময় হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে ৪ জন মাদক কারবারিকে। অভিযানে মোট ২২০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়, যার বাজারমূল্য প্রায় ৭০ হাজার টাকা। একই সঙ্গে দু’জন পলাতক মাদক ব্যবসায়ী পালিয়ে গেলেও তাদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
তিনটি অভিযানের মধ্যে প্রথমটি পরিচালিত হয় ৩০ জুন রাত ৯টা ২০ মিনিটে বাদেকল্লা বারান্দা বাড়ীর পার্শ্ববর্তী এলাকায়। সেখানে অভিযান চালিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান জুনাইদ নামের এক মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার পরিহিত প্যান্টের পকেট থেকে উদ্ধার করা হয় ২০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, যার ওজন ছিল ২.০ গ্রাম এবং আনুমানিক বাজারমূল্য ৬,০০০ টাকা। জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত জুনাইদ জানায়, সে গন্দ্রপা এলাকার দুখিনী নামে এক নারী মাদক সরবরাহকারীর সহায়তায় এই ব্যবসা পরিচালনা করত। পুলিশ তাকে ধরতে অভিযান শুরু করেছে।
পরের দিন ১ জুলাই রাত ১১টা ২৫ মিনিটে আকুয়া ফিরোজ লাইব্রেরীর মোড়ে অভিযান চালানো হয়। এ সময় পুলিশ উপস্থিতি টের পেয়ে তিনজন মাদক কারবারি পালানোর চেষ্টা করে। তাৎক্ষণিক ধাওয়া করে দুইজনকে আটক করা হয়— রিমন আহম্মেদ শান্ত ও মোঃ মনির হোসেন। তল্লাশি চালিয়ে রিমনের প্যান্টের বাম পকেট থেকে ও মনিরের ডান পকেট থেকে ৫টি করে মোট ১০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। তারা দুজনই পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে, দীর্ঘদিন ধরে তারা এলাকাভিত্তিক মাদক বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত। একজন পলাতক আসামি ওই সময় সটকে পড়ে।
এরপর ২ জুলাই রাতে চালানো অভিযানে আরও বড় সফলতা আসে। রাত ১০টা ৩০ মিনিটের দিকে চরপাড়া কফিক্ষেত এলাকায়, পপুলার হাসপাতালের পেছনের রাস্তায় মাদক বিক্রয়ের গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে ৩নং পুলিশ ফাঁড়ির টিম। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে এক যুবক পালিয়ে যায়, তবে অপরজন— হৃদয় ঘোষ নামে এক তরুণ—কে আটক করা হয়। তার প্যান্টের সামনের ডান পকেট থেকে একটি সাদা জিপার ব্যাগে রাখা ১৯০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। যা ওই তিন অভিযানের মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণ। স্থানীয় জনগণ ও নির্ভরযোগ্য সাক্ষীদের উপস্থিতিতে ঘটনাস্থলেই জব্দ তালিকা প্রস্তুত করা হয় এবং তাৎক্ষণিক আলামত থানায় নিয়ে আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।
এই তিনটি অভিযানে আলামত হিসেবে জব্দ করা মোট ২২০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট সংক্রান্ত প্রতিটি মামলায় ধৃত আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬(১) এর টেবিল ১০(ক)/৪১ ধারা অনুযায়ী পৃথক মামলা রুজু করা হয়েছে। সকল আসামিকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদে তারা মাদকদ্রব্য নিজ হেফাজতে রাখার বিষয় স্বীকার করেছে। অভিযানে প্রত্যেক সময় উপস্থিত ছিলেন নির্ভরযোগ্য স্থানীয় সাক্ষী ও ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কনস্টেবলরা, যারা ঘটনাস্থলে থেকে জব্দ তালিকা ও আলামত সংগ্রহে সহায়তা করেন।
এই সফল অভিযানের মূল কৃতিত্ব ৩নং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আবুল হোসেনের। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই মাদকবিরোধী অভিযানকে প্রাধান্য দিয়ে নিয়মিত গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও নজরদারির মাধ্যমে শহরের মাদকের চক্র ভেঙে দিতে কাজ করছেন। প্রতিটি অভিযানে তিনি নিজে সমন্বয় করেছেন এবং মাঠপর্যায়ে অফিসারদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ফলে পুলিশের সাহসী তৎপরতায় অপরাধীরা দিশেহারা এবং সাধারণ মানুষ ফিরে পেয়েছে স্বস্তি।
স্থানীয়দের মতে, আবুল হোসেন শুধু একজন দক্ষ পুলিশ কর্মকর্তা নন, বরং শহরের নিরাপত্তার একজন অভিভাবক। তার এই ভূমিকা শুধু পুলিশ বিভাগেই নয়, সাধারণ মানুষের মাঝেও প্রশংসিত হচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করতে এমন পদক্ষেপকে তারা স্বাগত জানিয়েছেন এবং তাকে দীর্ঘদিন একই দায়িত্বে রাখার দাবিও তুলেছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পলাতক দুই আসামির বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহ চলছে এবং দ্রুত তাদের আইনের আওতায় আনতে তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। ময়মনসিংহে মাদকবিরোধী লড়াইয়ে এই অভিযান একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য, যা প্রমাণ করে— সঠিক নেতৃত্ব ও নিষ্ঠা থাকলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী চাইলেই বড় অপরাধ দমন করতে পারে। ৩নং পুলিশ ফাঁড়ির এই অভূতপূর্ব অভিযানে এসআই, এএসআই ও কনস্টেবলদের পেশাদারিত্ব পুলিশ বাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থা আরও শক্ত করেছে।
প্রতিবেদন
দৈনিক কাগজের আলো
নির্বাহী সম্পাদক
