দাবি আদায়ে রাজপথে শিক্ষকরা: ময়মনসিংহে ৫৯০টি স্কুলের বকেয়া বিল পরিশোধের দাবিতে অনশন ও মানববন্ধন

দাবি আদায়ে রাজপথে শিক্ষকরা: ময়মনসিংহে ৫৯০টি স্কুলের বকেয়া বিল পরিশোধের দাবিতে অনশন ও মানববন্ধন
দৈনিক কাগজের আলো
প্রতিবেদন: মোঃ বিল্লাল হোসেন মানিক
ময়মনসিংহে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত ৫৯০টি বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা দীর্ঘদিনের বকেয়া বিল ও ভাউচার পরিশোধের দাবিতে রাজপথে নেমেছেন। পিইডিপি-৪ (প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি) এর সাব-কম্পোনেন্ট ২.৫ ‘আউট অফ স্কুল চিলড্রেন (OOSC-SPBK)’ প্রজেক্টের আওতায় পরিচালিত এসব স্কুলে ২০২৪ সাল থেকে পোশাক, পাঠ্য উপকরণ, ব্ল্যাকবোর্ড, চক, খাতা-কলম ইত্যাদির খরচ বিল জমা দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত এক টাকাও পরিশোধ করা হয়নি। বরং শিক্ষকরা দাবি করেছেন, সংশ্লিষ্ট সহকারী পরিচালক রুহুল আমিন নিজেই বলেছেন, ‘নিজ খরচে চালান, পরে বাজেট এলে সব বিল একত্রে দেওয়া হবে।’ কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি আজও বাস্তবায়ন হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে ১৯ জুন সকাল থেকে ময়মনসিংহ নগরীর বিভিন্ন স্কুল কেন্দ্রের শিক্ষক-শিক্ষিকারা একত্রে মানববন্ধন ও অনশন কর্মসূচি পালন শুরু করেছেন। আন্দোলনরত শিক্ষকরা জানান, তারা আর আশ্বাসে বিশ্বাস করেন না। এখন চাই বাস্তব পদক্ষেপ। শান্তা ইসলাম মিম, ঈদুল হাসান, মেহেদী হাসান, ইসরাত জাহান, মাহফুজুর রহমান, মহিউদ্দিন মোবারকসহ অনেকেই বলেন, “যখন আমরা ন্যায্য পাওনার কথা বলি, তখন আমাদের উপেক্ষা করা হয়। অথচ আমরা বিনা বেতনে বছরের পর বছর শিশুদের শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছি। এটা শুধু অবিচার নয়, এটি চরম অবহেলার প্রতিচ্ছবি।”
তারা দাবি করেন, এই খাতে বরাদ্দ থাকলেও তা সঠিকভাবে মাঠ পর্যায়ে পৌঁছায়নি। বরং পূর্ববর্তী দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা দুর্নীতির মাধ্যমে তা আত্মসাৎ করার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দাবি, রুহুল আমিন বিগত একটি ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের’ ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং তিনিই এই বিল নিয়ে দুর্নীতির মূল হোতা।
তাদের একমাত্র দাবি, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মফিদুল ইসলাম যেন জরুরি ভিত্তিতে বিষয়টি তদন্ত করে প্রকৃতপক্ষে বকেয়া বিল-ভাউচার পরিশোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। কারণ, এসব বিদ্যালয়গুলো ঝরে পড়া শিশুদের পুনরায় স্কুলে ফেরানোর একটি সফল উদ্যোগ হিসেবে কাজ করছে। স্কুলগুলো বন্ধ হয়ে গেলে বিপন্ন হবে শিশুদের ভবিষ্যৎ এবং সরকারের শতভাগ শিক্ষা অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যমাত্রা বাধাগ্রস্ত হবে।
বর্তমানে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১০০টি, সদর উপজেলায় ৭১টি এবং পুরো জেলায় ৫৯০টি স্কুল এই কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত হচ্ছে। এসব স্কুলে পড়ছে শত শত নিম্নবিত্ত পরিবারের শিশু, যারা বিনামূল্যে বই ও উপকরণ পেয়ে শিক্ষা পাচ্ছে। শিক্ষকরা বলছেন, সঠিকভাবে বিল পরিশোধ করা হলে তারা আরও উৎসাহের সাথে কাজ করতে পারবেন এবং স্কুলগুলোর কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে।
শিক্ষকদের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে যে, যতদিন না পর্যন্ত তাদের দাবি পূরণ হবে, ততদিন আন্দোলন চলমান থাকবে। তারা আশা করছেন, বর্তমান সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন শিক্ষা-খাতে দুর্নীতি ও অবহেলা বন্ধ করে এসব উপানুষ্ঠানিক স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
এ আন্দোলন শুধু অর্থনৈতিক অধিকার আদায়ের নয়, এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষার অধিকার রক্ষার আন্দোলন বলেও মনে করছেন ময়মনসিংহবাসী।
