কেওয়াটখালী ব্রিজ প্রকল্পে নকশা বদলে বাড়তি ব্যয় ও দুর্নীতির অভিযোগ, হাইকোর্টে রীট,ও মানববন্ধন

কেওয়াটখালী ব্রিজ প্রকল্পে নকশা বদলে বাড়তি ব্যয় ও দুর্নীতির অভিযোগ, হাইকোর্টে রীট
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি:
ময়মনসিংহের বহুল আলোচিত কেওয়াটখালী আর্চ স্টিল ব্রিজ প্রকল্পে অনুমোদিত নকশা উপেক্ষা করে সংযোগ সড়কে পরিবর্তন, ভূমি অধিগ্রহণে অনিয়ম ও অতিরিক্ত ব্যয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয়ের অভিযোগ উঠেছে। গত ১৪,০৬,২০২৫ শনিবার দুপুর ১২ টায় ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলন’ নামে নাগরিক সংগঠনটি এসব অভিযোগ তুলে ধরে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
সংগঠনের সমন্বয়ক আবুল কালাম আল আজাদ লিখিত বক্তব্যে জানান, একনেক অনুমোদিত নকশায় ৩২০ মিটার মূল ব্রিজ এবং ৫.১ কিলোমিটার সংযোগ সড়কসহ প্রকল্পের মোট দৈর্ঘ্য ছিল ৬.২ কিলোমিটার। অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৩,২৬৩ কোটি টাকা। কিন্তু বাস্তবে সংযোগ সড়ক বাড়িয়ে ৮.২ কিলোমিটার করা হয়েছে, যা অনুমোদনের বাইরে।
তিনি আরও জানান, প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণের পরিমাণ ৮১.৫৬ একর থেকে বাড়িয়ে ১১৩ একরে উন্নীত করা হয়েছে, যার ফলে অতিরিক্ত প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এ বাড়তি জমির মালিকদের অনেকেই রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় এতে দুর্নীতির সুস্পষ্ট আলামত রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
ময়মনসিংহ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র ফয়সাল ফারনিম জানান, নকশাবহির্ভূত ২.১ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণের ফলে ছোট-বড় ব্রিজ, র্যাম্প ও ওভারপাস নির্মাণের প্রয়োজন পড়ছে। এতে কৃষিজমি, বসতবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় স্থাপনা উচ্ছেদের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বন্ধ হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে, ফলে প্রকল্প ব্যয় আরও প্রায় ২,০০০ কোটি টাকা বাড়তে পারে।
সংগঠনের আরেক সদস্য বিপ্লব নিভ বলেন, নতুন সংযোগ সড়কটি পুরাতন চায়না সেতুর হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় যানজট কমার পরিবর্তে আরও বাড়বে। এমনিতেই ময়মনসিংহ বিশ্বের ৯ম ধীরগতির শহর হিসেবে চিহ্নিত, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পর তা ৫ম অবস্থানে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রকল্পের নকশা পরিবর্তন ও দুর্নীতির অভিযোগে হাইকোর্টে গত ৪ জুন ‘আবুল কালাম আল আজাদ বনাম বাংলাদেশ সরকার ও অন্যান্য’ শিরোনামে একটি রীট দায়ের করা হয়েছে। আদালত একনেক অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দেশনা চেয়ে রুল জারি করেছেন।
তদন্তের বিষয়ে জানাতে গিয়ে বক্তারা বলেন, সড়ক ও জনপথ মন্ত্রণালয় একটি চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করলেও এখনো পর্যন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ পায়নি।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে ছয় দফা দাবি উত্থাপন করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে অনুমোদিত মূল নকশা অনুযায়ী ব্রিজ নির্মাণ, জনসমাগম এলাকায় প্রকল্পের নকশা প্রদর্শন, নকশা পরিবর্তনে দায়ীদের পরিচয় প্রকাশ, দুর্নীতিতে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিতকরণ, জনসাধারণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভূমি অধিগ্রহণ ও নির্মাণকাজ স্থগিত রাখা।
সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ, সাংবাদিক ও পরিবেশবাদী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তারা বলেন, দ্রুত, স্বচ্ছ ও গণমুখীভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কেওয়াটখালী ব্রিজ ময়মনসিংহবাসীর জন্য উন্নয়নের দৃষ্টান্ত হতে পারে। অন্যথায় এটি হতে পারে আরেকটি ব্যর্থতার নাম।
দৈনিক কাগজের আলো
মোঃ বিল্লাল হোসেন মানিক
