ময়মনসিংহে পাউবো প্রকৌশলী জামিলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির পাহাড়: টেন্ডার কারসাজি, অগ্রিম টাকা উত্তোলন ও সম্পদের জাল

ময়মনসিংহে পাউবো প্রকৌশলী জামিলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির পাহাড়: টেন্ডার কারসাজি, অগ্রিম টাকা উত্তোলন ও সম্পদের জাল
বিশেষ প্রতিনিধি ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আখলাক উল জামিলের বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠে এসেছে। তিনি একাধিক প্রকল্পে অগ্রিম টাকা উত্তোলন, টেন্ডারে অনিয়ম, কমিশন বাণিজ্য এবং রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন।
২০২৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ব্রহ্মপুত্র নদীর বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে (টেন্ডার নম্বর ১০০৮০৯৩) অংশ নেয় দুটি প্রতিষ্ঠান—মেসার্স গুডম্যান এন্টারপ্রাইজ এবং মো. নাসির উদ্দিন মোল্লার প্রতিষ্ঠান। গুডম্যান ৭ কোটি ৭৭ লাখ ৪০ হাজার টাকায় এবং নাসির উদ্দিন ৭ কোটি ৫৭ লাখ ৮৩ হাজার টাকায় দরপত্র জমা দেয়। দরপত্রে প্রায় ২০ লাখ টাকার পার্থক্য থাকলেও, কম দরদাতা নাসির উদ্দিনকে বাদ দিয়ে গুডম্যানকে কাজ পাইয়ে দেওয়া হয়, যার পেছনে ঘুষ ও কমিশনের ভূমিকা রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পরবর্তীতে গুডম্যান কাজটি আরেক ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করে দেয়।
এদিকে ময়মনসিংহ জেলার মরিচারচর থেকে ঈশ্বরগঞ্জ পর্যন্ত পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদীর বাম তীর রক্ষা প্রকল্প এখনও প্রক্রিয়াধীন থাকলেও একাধিক দফায় বিপুল পরিমাণ অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে। সরকারি অনুমোদনের আগেই ওয়ার্ক অর্ডার ছাড়া চুক্তির টাকা তোলা হয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্ট সূত্রের। ঠিকাদারদের কাছ থেকে অগ্রিম ঘুষ নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে।
জানা গেছে, জামিল দিনাজপুরের সাবেক সংসদ সদস্য ইকবালুর রহমানের ভাগ্নে হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ময়মনসিংহে কর্তৃত্ব বজায় রেখেছেন। একাধিকবার বদলি হলেও রহস্যজনকভাবে আবারও ময়মনসিংহে ফিরে এসেছেন। পাউবো কর্মকর্তাদের অভিযোগ, তিনি প্রশাসনের একটি অংশকে ‘ম্যানেজ’ করে অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছেন।
একজন ঠিকাদার বলেন, “আমরা কম দামে দরপত্র দিয়েও কাজ পাইনি, কারণ কমিশন দিতে রাজি হইনি।” তিনি আরও জানান, টেন্ডার প্রক্রিয়া পুরোপুরি পক্ষপাতদুষ্ট এবং দুর্নীতিপূর্ণ।
জামিলের নামে ঢাকায় একাধিক বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, দিনাজপুরে জমি ও বাগানবাড়ির খোঁজ মিলেছে। অথচ এসব বিস্ময়কর সম্পদের উৎস অনুসন্ধানে প্রশাসন সম্পূর্ণ নীরব। কোনো ধরনের দৃশ্যমান তদন্ত বা পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে তার সাথে যোগাযোগ করতে মোবাইলে বার বার কল দিয়েও উনি কল রিসিভ করেননি।
“সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যদি দুর্নীতি বন্ধ না হয়, তাহলে দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়বে। জামিলের মতো দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে এখনই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।”
নাগরিক সমাজ ও সচেতন মহল মনে করছেন, জামিলের বিরুদ্ধে এতসব অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতা দুর্নীতিকে আরও উৎসাহ দিচ্ছে। এখন প্রয়োজন দ্রুত তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, নইলে উন্নয়নের নামে দুর্নীতিই পরিণত হবে নিয়মে।
