ভালোবাসার ছলনায় প্রাণ হারাল সুরাইয়া: স্বামী ও শাশুড়ির অমানবিক নির্যাতনে ময়মনসিংহে গৃহবধূর করুণ মৃত্যু
Oplus_131072

ভালোবাসার ছলনায় প্রাণ হারাল সুরাইয়া: স্বামী ও শাশুড়ির অমানবিক নির্যাতনে ময়মনসিংহে গৃহবধূর করুণ মৃত্যু
মোঃ বিল্লাল হোসেন মানিক সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টার ময়মনসিংহ বিভাগীয় প্রধান।
ময়মনসিংহে স্বামী ও শাশুড়ির অমানবিক শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ হারাল ২২ বছর বয়সী এক গৃহবধূ সুরাইয়া। এখন তার নিথর দেহ পড়ে আছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লাশ ঘরের ফ্রিজে। অল্প কিছু স্বর্ণালঙ্কারের জন্যই এই নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে।
জানা যায়, সুরাইয়া ও তার স্বামী তারেক একে অপরকে ভালোবেসে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। তবে ভালোবাসার সেই সম্পর্ক অল্প সময়েই রূপ নেয় দুঃস্বপ্নে। এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, তারেক বর্তমানে অন্য এক নারীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িত। ধারণা করা হচ্ছে, সেই পরকীয়ার পথের কাঁটা হিসেবে সুরাইয়াকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই এই নির্মম ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
তারেক একজন লেবারের কাজ করলেও তার চালচলন ছিল বিলাসবহুল, যা তার আয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এজন্য সে সব সময় সুরাইয়াকে বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য চাপ দিত এবং নানা অজুহাতে শারীরিকভাবে নির্যাতন করত। এমনকি ঘটনার তিনদিন আগেও সুরাইয়া চরম নির্যাতনের শিকার হন।
এই দীর্ঘ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ফলে তার অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে তাকে দ্রুত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। হাসপাতাল পৌঁছানোর আগেই চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার পর থেকে তারেকের বাড়ি তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। এলাকাবাসী জানায়, সুরাইয়ার আর্তনাদে একসময় যে বাড়ি মুখরিত ছিল, এখন সেখানে শুধুই হাহাকার। মেয়ের মৃত্যুর খবরে ভেঙে পড়েছেন সুরাইয়ার বাবা। থানার সামনেই কান্নায় ভেঙে পড়ে আহাজারি করতে দেখা যায় তাকে।
ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করে ময়মনসিংহের কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জকে আমাদের ক্রাইম রিপোর্টার ফোনে অবগত করলে তিনি সঙ্গে সঙ্গেই আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ইতোমধ্যে মামলার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং দুই পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেছেন।
সুরাইয়ার দাফনের প্রক্রিয়া পোস্টমর্টেম রিপোর্ট শেষ হলেই সম্পন্ন করা হবে বলে জানান পরিবারের সদস্যরা। এদিকে পরিবারের পক্ষ থেকে এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও জড়িত সকলের সর্বোচ্চ শাস্তি, অর্থাৎ ফাঁসির দাবি জানানো হয়েছে।
সুরাইয়ার এই করুণ পরিণতি সমাজের প্রতিটি স্তরকে নাড়া দিচ্ছে। ভালোবাসার নামে শুরু হওয়া একটি সম্পর্ক কিভাবে শোষণের রূপ নিতে পারে, সুরাইয়া তার নির্মম দৃষ্টান্ত। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই পারে ভবিষ্যতে এমন অন্যায় রোধ করতে।
