হাউজিং কোম্পানির সুবিধায় বদলে যাচ্ছে সংযোগ সড়ক: কেওয়াটখালি ব্রিজে দুর্নীতির নতুন অধ্যায়

Oplus_131072
কাগজের আলো
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
হাউজিং কোম্পানির সুবিধায় বদলে যাচ্ছে সংযোগ সড়ক: কেওয়াটখালি ব্রিজে দুর্নীতির নতুন অধ্যায়
ময়মনসিংহের কেওয়াটখালিতে নির্মাণাধীন আর্চ স্টিল ব্রিজ প্রকল্পটি বর্তমানে তীব্র বিতর্ক ও জনআলোচনার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদীর ওপর প্রস্তাবিত তিনটি সেতুর মধ্যে অন্যতম এই সেতুটি শুরুতে একটি উন্নতমানের কংক্রিট সেতু হিসেবে অনুমোদিত হলেও, হঠাৎ করেই অস্ট্রেলিয়ার সিডনি হারবার ব্রিজের আদলে এটি একটি বিলাসবহুল ‘আর্চ স্টিল ব্রিজ’ প্রকল্পে রূপান্তরিত হয়।
এই আকস্মিক রূপান্তরের পেছনে প্রকল্প ব্যয়ের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, মূল বাজেট ছিল প্রায় ৩ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা। কিন্তু প্রকল্পের নকশা ও সংযোগ সড়কের রুট পরিবর্তনের ফলে ব্যয় বেড়ে গেছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো—এই পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত এসেছে একনেকের অনুমোদন ছাড়াই।
সূত্র জানায়, সংযোগ সড়কের নতুন নকশাটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে এটি দুটি প্রভাবশালী হাউজিং কোম্পানির জমির পাশ দিয়ে যায়। এর ফলে সড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় ১ কিলোমিটার বেড়েছে এবং অতিরিক্ত জায়গা অধিগ্রহণ করতে গিয়ে সরকারকে দিতে হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। অভিযোগ উঠেছে, পরিকল্পিতভাবে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে সাধারণ বসতঘরকে শিল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখিয়ে অনেক গুণ বেশি দামে অধিগ্রহণ করা হয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ভূমি অধিগ্রহণে একটি প্রভাবশালী চক্র জড়িত রয়েছে, যারা দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের টাকা আত্মসাৎ করছে। টিনশেড বাড়িকে কারখানা দেখিয়ে ২-৩ গুণ বেশি টাকা আদায়ের নজির মিলেছে। এসব অনিয়মের পেছনে কিছু অসৎ জনপ্রতিনিধি, কর্মকর্তাসহ হাউজিং ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তি জড়িত।
এদিকে এই ব্রিজের নকশায় রেললাইন সংযুক্ত না থাকায় ময়মনসিংহ থেকে মোহনগঞ্জ, গৌরীপুর, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ গুরুত্বপূর্ণ জেলার সঙ্গে ভবিষ্যতের রেলযোগাযোগ হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্থানীয় সুশীল সমাজ ও পরিবেশবাদীরা বলছেন, একটি সাধারণ কংক্রিট সেতুকে অপ্রয়োজনীয়ভাবে বিলাসবহুল করে তোলা এবং সংযোগ সড়কের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রুট পরিবর্তনের মাধ্যমে রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করা হচ্ছে। এতে প্রকল্পটি জনস্বার্থে না হয়ে দুর্নীতির প্রতীক হয়ে উঠেছে।
এমন অবস্থায় ময়মনসিংহবাসীর প্রশ্ন—“আর্চ ব্রিজে আসলে কি হচ্ছে?”
সরকারের উচিৎ, অবিলম্বে সাবেক অনুমোদিত ৫ লেনের নকশা পুনরায় চালু করে রেল স্প্যানসহ প্রকল্পটি স্বচ্ছভাবে বাস্তবায়ন করা এবং দুর্নীতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।