ময়মনসিংহ শহরের চরপাড়া এলাকায় লাইসেন্স বিহীন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম, জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ও উদ্বেগ
ময়মনসিংহ শহরের চরপাড়া এলাকায় লাইসেন্স বিহীন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম, জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ও উদ্বেগ
কাগজের আলো ডেস্ক | প্রতিনিধি: মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন মানিক, ময়মনসিংহ বিভাগীয় প্রধান, সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টার
ময়মনসিংহ শহরের চরপাড়া এলাকার প্রাইভেট হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে লাইসেন্স বিহীন কার্যক্রম চলছে, যা স্থানীয় জনগণের মধ্যে চরম ক্ষোভ এবং উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। অভিযোগ উঠেছে যে, এসব প্রতিষ্ঠান সঠিক চিকিৎসা সেবা প্রদান না করে অবাধে পরিচালিত হচ্ছে, এবং এখানকার স্বাস্থ্যসেবা রোগীদের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করেছে।
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং অবৈধ কার্যক্রম
চরপাড়া এলাকার কিছু হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার দীর্ঘদিন ধরে লাইসেন্স ছাড়াই চলাচল করছে। এসব প্রতিষ্ঠানগুলোতে সঠিক স্বাস্থ্যসেবা বা নিরাপত্তা নেই, যা রোগীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা অভিযোগ করেছেন, যে এখানে প্রাপ্ত চিকিৎসকগণের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কোনো নিশ্চয়তা নেই, এবং যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে গিয়ে তাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব দেখা যায়। এমনকি, কিছু হাসপাতালের পরিবেশও অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়েছে, যা বিশেষ করে রোগীদের জন্য মারাত্মক হুমকি।
ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনা
এমন পরিস্থিতিতে ভুল চিকিৎসার ফলে মৃত্যুর ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্প্রতি এমন কিছু ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। উদাহরণস্বরূপ:
- রাজীব আহমেদ নামের স্থপতি চর্মরোগের চিকিৎসা নিতে গিয়ে ভুল চিকিৎসা ও চিকিৎসার অবহেলায় মারা যান। তার পরিবার অভিযোগ করে যে, চিকিৎসকের অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার কারণে এই মৃত্যু হয়েছে।
- তাসনিয়া জাহান তনয়া (১২) নামের এক ছাত্রী অপারেশন চলাকালীন ভুল চিকিৎসার কারণে মারা যান। তার পরিবার অভিযোগ করে, চিকিৎসকের গাফিলতি ও ভুল চিকিৎসার কারণে এই মৃত্যু হয়েছে।
- পলি সাহা (২৪) নামের এক নারী প্রসবকালীন অস্ত্রোপচারের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে মারা যান। তার পরিবার অভিযোগ করে, চিকিৎসকের অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার কারণে এই মৃত্যু হয়েছে।
জনগণের উদ্বেগ ও প্রশাসনের কাছে দাবি
স্থানীয় জনগণ এবং সচেতন মহল প্রশাসনের কাছে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। একাধিক বাসিন্দা জানান, তারা প্রথমদিকে সস্তা চিকিৎসার প্রলোভনে এসব প্রতিষ্ঠানে গিয়েছিলেন, কিন্তু পরে জানতে পারেন যে, এখানে সেবা গ্রহণের ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যায়।
“এই হাসপাতালগুলোতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব, অভিজ্ঞ চিকিৎসক নেই, ফলে এখানে আসা রোগীদের জীবন বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়ে,” একজন রোগী অভিযোগ করেছেন।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের উদ্বেগ
এদিকে, স্বাস্থ্য বিভাগের কিছু কর্মকর্তা এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান,
“অবৈধ ও লাইসেন্স বিহীন প্রতিষ্ঠানগুলোর কারণে আমাদের শহরের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় গভীর সংকট দেখা দিচ্ছে। এগুলো দীর্ঘদিন ধরে নিয়মবহির্ভূতভাবে চলছিল, যা রোগীদের নিরাপত্তা ও সঠিক সেবা প্রদানে বাধা সৃষ্টি করছে।”
দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান
স্থানীয় জনগণ এবং সচেতন মহল প্রশাসনকে অবিলম্বে এসব হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানিয়েছে। তাদের মতে, যদি প্রশাসন এখনই এই সমস্যা সমাধান না করে, তবে এটি ময়মনসিংহ শহরের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি করতে পারে।
অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া না হলে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
লাইসেন্স যাচাই ও কঠোর পদক্ষেপের দাবি
প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স যাচাই করা জরুরি। এজন্য প্রশাসনের কাছে শহরের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে স্বাভাবিক রাখতে এবং জনস্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ময়মনসিংহের সচেতন মহল আশা করছে যে, প্রশাসন দ্রুততার সাথে এসব হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স যাচাই করবে এবং অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেবে।
দেশের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সংকট
এটি শুধু ময়মনসিংহ শহরের জন্য নয়, বরং পুরো দেশের জন্য একটি বড় সংকট হয়ে দাঁড়াতে পারে, যদি অবৈধ স্বাস্থ্য কার্যক্রম বন্ধ না হয়। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফেরানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য এখনই প্রশাসনের সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি, যাতে ভবিষ্যতে বড় ধরনের স্বাস্থ্য সংকট এড়ানো সম্ভব হয়।
