দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুদকের অভিযান: চার স্থানে অনিয়মের প্রাথমিক সত্যতা মিলল


দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুদকের অভিযান: চার স্থানে অনিয়মের প্রাথমিক সত্যতা মিলল
ঢাকা, ২০ মার্চ ২০২৫:
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আজ চারটি পৃথক স্থানে এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করেছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, গোপালগঞ্জ, বগুড়া ও মাদারীপুরে পরিচালিত এসব অভিযানে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, টেন্ডার জালিয়াতি ও নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের মতো অনিয়মের প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে।
বিটিভিতে অর্থের বিনিময়ে শিল্পী তালিকাভুক্তি ও ভুয়া বিলের অভিযোগ
দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে পরিচালিত এক অভিযানে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ভবনে অর্থের বিনিময়ে ১,৭৯১ জন শিল্পী তালিকাভুক্তি, একই অনুষ্ঠান পুনঃপ্রচার করে নতুন বিল উত্তোলন এবং প্রকল্পে ভুয়া বিল-ভাউচার দেখিয়ে টাকা আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করা হয়। এনফোর্সমেন্ট টিম সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করে এবং প্রাথমিক পর্যালোচনায় বেশ কিছু অনিয়মের প্রমাণ পায়। বিল-ভাউচার সংক্রান্ত নথিপত্র বিশ্লেষণ করে কমিশন বরাবর প্রতিবেদন দাখিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গোপালগঞ্জে ১১ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ!
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বিশেষ বরাদ্দের ৭৭টি প্রকল্পের মধ্যে ১১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদক জেলা কার্যালয়, গোপালগঞ্জ অভিযান পরিচালনা করে। তদন্তে ৫টি প্রকল্পে বড় ধরনের অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে:
১. উত্তর আটাশীবাড়ী কবরস্থান – প্রকল্পের টাকা দিয়ে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি ভরাট।
2. উত্তর আটাশীবাড়ী হেফজোখানা – যেখানে প্রকল্পের কথা বলা হয়েছে, সেখানে কোনো হেফজোখানা নেই।
3. ডগলাস মেমোরিয়াল উচ্চবিদ্যালয় – সামান্য মাটি ফেলে বরাদ্দের বড় অংশ আত্মসাৎ।
4. গাবভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় – আংশিক কাজ করেও অধিকাংশ অর্থ লোপাট।
5. শেখ হাসিনা আদর্শ সরকারি মহাবিদ্যালয় – সামান্য কাজ করেও বিশাল অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ।
এই অনিয়মে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ কয়েকজন প্রভাবশালীর সংশ্লিষ্টতা চিহ্নিত হয়েছে। প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশসহ পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন কমিশনে পাঠানো হবে।
বগুড়ায় ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণে অনিয়ম
পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ পিএলসি কর্তৃক বগুড়ায় ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগে দুদক জেলা কার্যালয়, বগুড়া অভিযান পরিচালনা করে। টিম সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে এবং বিভিন্ন সাইট পরিদর্শন করে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে, যা বিশ্লেষণের পর কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
মাদারীপুরে সরকারি ভবন নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ
মাদারীপুর গণপূর্ত বিভাগের “সমন্বিত সরকারি অফিস ভবন” নির্মাণকাজে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, মাদারীপুর অভিযান পরিচালনা করে। সরেজমিন পরিদর্শন ও নথিপত্র বিশ্লেষণে অনিয়মের বেশ কিছু প্রমাণ মেলে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্য গ্রহণসহ রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে কমিশন বরাবর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
দুদকের এই ধারাবাহিক অভিযানে সরকারি অর্থের অপচয় ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের ইঙ্গিত মিলেছে। কমিশন এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।