
এক নম্বর আসামি হয়েও পুলিশে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন ময়মনসিংহের ইমরান!
ময়মনসিংহ জেলার ৭ নং চরনিলক্ষিয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (মেম্বার) রানী বেগম ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, সন্ত্রাসী কার্যক্রমে সহায়তা এবং পুলিশের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সবচেয়ে গুরুতর বিষয় হলো, রানী মেম্বার ও তার ছোট ছেলে ইমরানের নামে মামলা থাকলেও, ইমরান বর্তমানে নোয়াখালীতে পুলিশ প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন!
ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতি
রানী মেম্বারের বিরুদ্ধে সরকারি ত্রাণ চুরি, রেশন কার্ড বিক্রি, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড ৪,০০০ টাকা করে বিক্রি করা হয়। এছাড়া, সরকারি রেশন কার্ড ও চাল আত্মসাৎ করে কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে আগে থেকেই , যা মিডিয়ায় প্রকাশিত হলেও টাকা দিয়ে ধামাচাপা দেওয়া হয়।
এছাড়া, গত জাতীয় নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে আমিনুল হক শামীম ট্রাক মার্কার নির্বাচনী প্রচারণার জন্য তার মেয়ে ১০ লাখ টাকা প্রদান করেন। সেই অর্থ দিয়ে রানী মেম্বার পুরো ৩টি ওয়ার্ড পরিচালনা করেন।
অবৈধভাবে পুলিশে চাকরি দেওয়ার জন্য ঘুষ লেনদেন
অভিযোগ রয়েছে, রানী মেম্বারের বড় ছেলে মোরসালিন ইমেল বর্তমানে গাজীপুর মেট্রোতে পুলিশ কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত। তিনি একসময় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলি বর্ষণকারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। পরে তিনি অস্ত্র ফেলে বাড়িতে চলে আসেন, কিন্তু পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে নতুন নির্দেশনা পেয়ে কর্মস্থলে পুনরায় যোগ দেন।
তবে, তার নামে কোনো মামলা নেই। কিন্তু বর্তমান মামলার বাঁদিকে এই কনস্টেবল হুমকি দিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
কিন্তু তার ছোট ছেলে ইমরান, যার নামে মামলা রয়েছে, সেও এখনো পুলিশ কনস্টেবল হিসেবে নোয়াখালীতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন! অভিযোগ রয়েছে, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটুকে ৫ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে বড় ছেলের চাকরি পাইয়ে দেওয়া হয়েছে।
আর ছোট ছেলের চাকরির জন্য কোনো টাকা না দিলেও, রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন আরিফ এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ইমরানকে অস্ত্র সরবরাহ করতেন। শুধু তাই নয়, বৈষ্ণব বিরোধী আন্দোলনের সময় লাঠি, বাঁশ, শোটা এবং দেশীয় অস্ত্রের যোগান দিতেন ইমরান ও তার পরিবার।
এছাড়া, আরিফ নির্বাচনের সময় ভোট কেনার জন্য ৩০০০০ হাজার টাকার বিনিময়ে তার ভোট কিনে নেন। বৈষ্ণব বিরোধী ময়মনসিংহের আন্দোলনের ব্যবহৃত ৩ বস্তা বাঁশের লাঠি সরবরাহ করেন, যা ছাত্রদের মারধরের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে,
এত বড় অপরাধের পরও রানী মেম্বার ও তার ছেলের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে যে, বর্তমান মামলাটির জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর তদন্ত থাকলেও ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে মামলাটি ধামাচাপা চেষ্টা চলছে বলে জানায় বিশ্বস্ত সূত্র।
এছাড়া, মামলাটি এখনো কোনো নির্দিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেওয়া হয়নি। কারণ, পুলিশ ও প্রশাসনের ভেতরে রানী মেম্বারের পরিবার আগেই দর-কষাকষি করেই যাচ্ছে।
ক্ষমতার দাপটে আইনের উল্টো পথে প্রশাসন
রানী মেম্বারের পরিবার রাজনৈতিক ক্ষমতা ও প্রশাসনের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে একের পর এক অবৈধ কাজ করে যাচ্ছে। একজন মামলার আসামি হয়েও পুলিশে চাকরি করতে পারে, এটি প্রশাসনের দুর্বলতা ও দুর্নীতির পরিষ্কার প্রমাণ।
এলাকাবাসী প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, রানী মেম্বার ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে অবিলম্বে তদন্ত করে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
প্রশ্ন রয়ে যায় – কীভাবে একজন মামলার আসামি হয়েও পুলিশ বাহিনীতে চাকরি করতে পারে? প্রশাসন কি এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেবে? নাকি আবারও টাকা আর ক্ষমতার জোরে সত্য ধামাচাপা পড়ে যাবে?