সাতক্ষীরা পাউবো’র অফিস সহায়ক খোরশেদ আলমের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিনিধি :
এমনিতেই সাতক্ষীরা জেলা প্রাকৃতিক দূর্যোগের কাছে বিধ্বস্ত। এমতাবস্থায় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পাউবো’র এক অফিস সহায়কের বিরুদ্ধে সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তার দাপটে প্রশাসনও দিশেহারা হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, এই অফিস সহায়কের নাম খোরশেদ আলম, দপ্তর: সাতক্ষীরা পওর বিভাগ-১একটা সময়ে অফিস সহায়ক কাজ করলেও তিনি এখন একজন পাউবোর কর্মকর্তার মতো । কাগজে কলমে অফিস সহায়ক থাকলেও তবে বাস্তবে তিনি একজন প্রভাবশালী ঠিকাদার। তার ছেলের নামে ঠিকাদারি লাইসেন্স নিয়ে সাতক্ষীরা শ্যামনগর পাউবোর পুরো উন্নয়ন কাজের নিয়ন্ত্রণ এখন খোরশেদ আলমের হাতে। অভিযোগ রয়েছে খোরশেদ আলমের সঙ্গে কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে দিনের পর দিন চলছে এই অনিয়ম। পাউবো তে তিনি একত্র আধিপত্য বিস্তার করে রামরাজত্ব কায়েম করেছে।
সাতক্ষীরার পাউবো-১ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলার উন্নয়নের জন্য সরকার কয়েকশত কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে জলাবদ্ধতা নিষ্কাশন ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করার জন্য। কিন্তু সরকার এই ডেল্টা প্লানের কাজ বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই অফিস সহায়কের (অদৃশ্য) ঠিকাদার খোরশেদ আলম। তার লাগামহীন স্বেচ্ছাচারিতা ও ঠিকাদারী ব্যবসা,সরকারি সম্পদ লুটকারী,নারী কেলেঙ্কারিসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে পাউবোর অফিসে।প্রকৌশলীর দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, সহকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে পানি উন্নয়ন বোর্ড এর বিভাগীয় প্রকৌশলীর আমিনুর স্বেচ্ছাচারিতা ও ঘুষ দুর্নীতির কারণে শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ে ব্যাপক গুঞ্জন চলছে। বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্য, দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে জালিয়াত চক্র আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে তারা কাউকে পরোয়া করছে না। ফলে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম যথাসময়ে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছে না। গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, সাতক্ষীরা পাউবোর জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী সালাউদ্দিনের এবং সাতক্ষীরা শ্যামনগররে উপ- নির্বাহী পাউবোর অফিস সহায়ক খোরশেদ আলমের বিরুদ্ধে।
বর্তমানে চলমান তার ঠিকাদারি ব্যবসা,সাতক্ষীরা সহ তার নিজের এলাকা কুষ্টিয়া ও ঢাকায় রয়েছে আলিশান গাড়ী,বাড়ি। বিষয়গুলি নিয়ে কোনো অভিযোগ করেও প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন অনান্য ঠিকাদাররা। এবিষয়ে উপ- বিভাগীয় প্রকৌশল ইমরান সরদার জানান,এটা আমাদের বিষয় না আমি এবিষয়ে কিছুই বলতে পারবো না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুুক এক ঠিকাদার বলেন, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিটি কাজের জন্য টাকা গুনতে হয়। টাকা না দিলে নানা হয়রানির শিকার হতে হয়।
২০১৮ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত শতাধিক কোটি টাকার কাজ জরুরী সংস্কারের নামে কোনরকম টেন্ডার ছাড়াই নিজের পছন্দের লোক দিয়ে করানো হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ঠিকাদারের নাম ব্যবহার করে সংস্কারের কাজ দেখিয়ে বিল তুলে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে কোটি কোটি টাকা।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার ভুক্তভোগি মানুষ এসব হরিরলুটের বিরোধীতা করলেও সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা আবুল খায়ের ছিলেন বহাল তবিয়তে আর আবুল খায়েরর বদলির পর
ইচ্ছেমতো লুটপাটের খবর বিভিন্ন সভা সমাবেশে মিডিয়ায় প্রকাশ পেলেও অজ্ঞাত কারনে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হতনা
বর্তমানে এলাকার কিছু জামায়েত-বিএনপির নেতাকর্মী ও তার আত্মীয় স্বজনের মাধ্যমে স্থানীয় এক ক্ষমতাশীল সাংবাদিক নেতাকে ম্যানেজ করে টেন্ডার ছাড়া বেড়ীবাধ নির্মাণ কাজে এক এক জন ঠিকাদারের নামে ২০/২৫ টি করে কার্যাদেশ দিয়েছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় উক্ত ঠিকাদারগণ কোন সাইটে কাজ করতে হবে সেটা জানে না ও কাজের সাইটে যেয়ে কাজ বাস্তবায়নও করেনি।
যৎসামান্য কিছু কাজ সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপ – বিভাগীয় নির্বাহী প্রকৌশলী অফিসের কর্মচারী অফিস সহায়ক খোরশেদ আলম সহযোগিতায় কিছু সাধারণ শ্রমিক দিয়ে দায়সারাভাবে করা হচ্ছে। আর এখান থেকে তুলে নেয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকা
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শ্যামনগর উপজেলার আটুলিয়া, বুড়িগোয়ালিনী ও কৈখালী ইউনিয়নে প্রতি বছরই প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। টেকসই বেড়িবাঁধের অভাবে অতিরিক্ত জোয়ারের পানি ও নদী ভাঙনে এলাকাগুলো প্লাবিত হয়। এতে মারাত্মক ক্ষতি হয় এলাকাবাসীর।
তারপরও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। ওই অফিসের একটি সুত্র জানিয়েছেন, অফিস সহায়ক খোরশেদ আলমের ইতিমধ্যে তার পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের স্বনামে-বেনামে প্রচুর অবৈধ অর্থ ও সম্পদ হস্তান্তর করেছেন। ঢাকা ও খুলনা সাতক্ষীরা শহরে একাধিক ফ্লাট, বাড়ি ও গাড়ি রয়েছে তার। দুদক সঠিক তদন্ত করলে এসব অবৈধ অর্থ সম্পদের সন্ধান পাওয়া যাবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
বুড়িগোয়ালিনী ইউপি চেয়ারম্যান হাজী নজরুল ইসলামের বলেন, ‘খোরশেদ আলম একজন পিয়ন হলেও তার হাতে জিম্মি এসও, এসডিও সাহেবরা। খোরশেদ আগেই জানেন সাতক্ষীরায় কোন ঠিকাদার কাজ পাচ্ছে। এসও, এসডিওরা ঠিকাদারকে বলেন, খোরশেদ আলমের মাধ্যম দিয়ে এলে আমাদের সবাইকে পাবেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে খোরশেদ আলমের ওপর বিরক্ত হয়ে তার কার্যক্রম স্থগিত করার জন্য উপজেলা পরিষদে আমরা ইউনিয়ন পরিষদে জনগণের দাবি মুখে রেজুলেশন করেছিলাম এমনকি দুদকে লিখিত অভিযোগ করে ও একাধিক বার নিউজ হলেও তার বিরুদ্ধে কোন বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়নি পাউবো প্রশাসন। টাকার জোরে বারবার রীতিমতো তার সব অন্যায় ধামাচাপা পড়ে যায়। সাতক্ষীরা বিখ্যাত চিংড়ি, আম ও সুন্দরবনের মধু পাঠিয়ে উপরমহলকে ম্যানেজ করে বহাল তবিয়তে রয়েছে তেলবাজ খোরশেদ আলম

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশের সময়: বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ । ১১:০৩ পূর্বাহ্ণ