সাংবাদিক সুবেদ আলী রাজা কারাগারে: ষড়যন্ত্র নাকি অপরাধ? পর্নোগ্রাফি মামলাকে ঘিরে উত্তাল ময়মনসিংহ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশের সময়: মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৫ । ৪:১৯ পূর্বাহ্ণ

 


সাংবাদিক সুবেদ আলী রাজার বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি মামলা: ষড়যন্ত্র নাকি সত্যি? দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগে উত্তাল ময়মনসিংহ

 বিশেষ প্রতিবেদন |

ময়মনসিংহে একজন সাংবাদিক  সুবেদ আলী রাজার বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি আইনে দায়ের করা মামলাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঞ্চল্য ও মতবিরোধ তৈরি হয়েছে। সাংবাদিকতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সাংবাদিক সমাজ, মানবাধিকার কর্মী ও সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে।

গ্রেপ্তার ও মামলার পটভূমি

২০২৫ সালের ৮ এপ্রিল ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় সাংবাদিক রেজাউল করিম রেজা একটি পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা (মামলা নং: ৪২/২৫) দায়ের করেন। অভিযোগে বলা হয়, ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলে রেজা ও দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ-এর সম্পাদক খায়রুল আলম রফিকের ছবি ব্যবহার করে অশ্লীল ভিডিও তৈরি করে সামাজিকভাবে হেয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এরই ভিত্তিতে ১৮ এপ্রিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে সাংবাদিক সুবেদ আলী রাজাকে গ্রেপ্তার করে। তিনি কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা এবং বর্তমানে ময়মনসিংহ শহরের আর কে মিশন রোডে বসবাস করেন।

সুবেদ আলীর দাবি: “আমি ষড়যন্ত্রের শিকার”

সুবেদ আলী রাজা নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। তিনি বলেন:

“আমার নামে কোনো ফেসবুক আইডি নেই। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও সাজানো মামলা। আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, কারণ আমি দৈনিক একটি পত্রিকার মালিক। সেই পত্রিকার মালিকানা নিয়ে রেজা ও রফিক দীর্ঘদিন ধরে ষড়যন্ত্র করে আসছে।”

তিনি আরও বলেন,

“চাঁদা না দেওয়ায় এবং তাদের অপসাংবাদিকতার প্রতিবাদ করায় তারা পরিকল্পিতভাবে আমাকে ফাঁসিয়েছে। তারা নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় ব্যবহার করে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছে। এই মামলা একটি বৃহত্তর দুর্নীতিগ্রস্ত চক্রের হাতিয়ার।”

পরিবার ও আইনজীবীর বক্তব্য

সুবেদ আলী রাজার স্ত্রী ও পরিবার বলছে, এটি একজন নিরপরাধ মানুষকে ফাঁসানোর পরিকল্পিত প্রচেষ্টা।
রাজার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জানান:

“এই মামলায় কোনো ডিজিটাল ফরেনসিক প্রমাণ নেই। কেবল অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা উচ্চ আদালতে জামিন ও মামলার বাতিল চেয়ে আবেদন করব। এটি একটি ‘অ্যাবিউজ অব ল’।”

প্রতিপক্ষের বক্তব্য: “আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে মামলার কার্যক্রম চলছে”

প্রতিদিনের কাগজ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খায়রুল আলম রফিক বলেন:

“আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমাদের পত্রিকার ময়মনসিংহ প্রতিনিধি রেজাউল করিম রেজা বাদী হয়ে মামলা করেছেন এবং প্রশাসন  নিজ দায়িত্বে সুবেদ আলী রাজাকে গ্রেপ্তার করেছে। অভিযোগের সত্যতা তদন্তের মাধ্যমে প্রমাণ হবে।”

রেজাউল করিম রেজাও বলেন:

“আমরা ভুয়া আইডি ও পর্নোগ্রাফির শিকার হয়েছি। আইনের মাধ্যমে বিচার চাইছি। মামলার তদন্ত চলছে, বিচারিক প্রক্রিয়াই সত্যতা নির্ধারণ করবে।”

সাংবাদিক সমাজ ও মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিক্রিয়া

ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব, সাংবাদিক ইউনিয়ন ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো একে একে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে।
বাংলাদেশ লিগেল এন্ড হিউম্যান রাইট সার্ভিসেস ফাউন্ডেশন এর ময়মনসিংহ জেলা সভাপতি মোঃ সাদেকুর রহমান সাদেক  বলেন:

“এটি সাংবাদিকতার স্বাধীনতা হরণের উদাহরণ। অবিলম্বে সুবেদ আলী রাজার মুক্তি এবং স্বচ্ছ তদন্ত দাবি করছি।”

ময়মনসিংহের একজন সিনিয়র সাংবাদিক  জানায়:

“প্রমাণ ছাড়া গ্রেপ্তার উদ্বেগজনক। সুবেদ আলী রাজার জন্য।

বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ইউনিয়নের (BMUJ) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শিবলী সাদিক খান বলেন:

“আমাদের নিজেদের ভেতরের দ্বন্দ্ব জনসমক্ষে এনে সাংবাদিকতার ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। দ্রুত মীমাংসা হওয়া উচিত।”

তিনি আরও বলেন,

“রফিক আমার স্নেহের ভাই, কিন্তু সাংবাদিকতা সম্মানের পেশা, নিজেরা নিজেদের অসম্মান করলে সমাজে আমাদের অবস্থান দুর্বল হয়ে যাবে।”

রাজনৈতিক প্রশাসনিক সামাজিক সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের কাছে হাসির পাত্র হয়ে যাবে এই সাংবাদিকতার পেশাটি।

চাঞ্চল্যকর অভিযোগ: রেজা ও রফিকের অতীত

সুবেদ আলী রাজার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, রেজা ও রফিক নিজেরাই ভুয়া আইডি তৈরি, চাঁদাবাজি এবং অপসাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত। স্থানীয় সূত্র ও সাংবাদিকদের মধ্যে এই দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে রয়েছে:

  • খায়রুল রফিক:
    • সাইবার অপরাধে পূর্বে কারাভোগ
    • ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা
    • একাধিক প্রতারণামূলক মামলায় অভিযুক্ত
    • সাংবাদিক পরিচয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগ
  • রেজাউল করিম রেজা:
    • নারীবাণিজ্যের অভিযোগ
    • মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি
    • পুলিশের সঙ্গে অসৎ সম্পর্ক গড়ে তোলে অপরাধ ঢাকার চেষ্টা

ভবিষ্যৎ করণীয় ও জনমতের দাবি

ঘটনার পেছনে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তদন্ত কর্মকর্তা  জানান:

“তদন্ত চলছে। ডিজিটাল ফরেনসিক রিপোর্ট ছাড়া অভিযোগপত্র দেওয়া হবে না।”

এ বক্তব্য থেকেই বোঝা যায়, মামলার সময় কোনো ডিজিটাল প্রমাণ ছিল না। যা পুরো প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

সাংবাদিকতা ও মানবাধিকারের পক্ষে কাজ করা সংগঠনগুলোর একটাই বক্তব্য:
“মিথ্যা মামলার বিচার চাই, ভুল বোঝাবুঝির অবসান চাই,  সুবেদ আলীর মুক্তি চাই!”


প্রতিবেদন:  কাগজের আলো,
মোঃ বিল্লাল হোসেন মানিক 


 

কপিরাইট © নবকাল সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত

প্রিন্ট করুন