
৩৬ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রামে অবিচল শ্রমিক নেতা দেবব্রত দাস দুকুল: নিপীড়ন-নির্যাতনের গল্পে এক সাহসী অধ্যায়
ময়মনসিংহ প্রতিনিধিঃ
দীর্ঘ ৩৬ বছরের রাজনৈতিক জীবনে অসংখ্য বাধা, নিপীড়ন, মামলা ও কারাবরণের পরও অটল থেকেছেন ময়মনসিংহ জেলার বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা ও বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান কল্যাণ ফান্ডের আহবায়ক দেবব্রত দাস বকুল। পাশাপাশি তিনি ময়মনসিংহ জেলা মিশুক বেবিটেক্সি, টেক্সিক্যাব ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের (রেজি. নং ২৯৯১) সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন।
দেবব্রত দাস বকুল ১৯৮৯ সালে রাজনীতিতে পা রাখেন ময়মনসিংহ সিটি কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র অবস্থায়। ময়মনসিংহ জেলা শ্রমিক দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কাশেম সাহেব ও সুজাউদ্দিন সুজা’র হাত ধরে তার রাজনীতির হাতেখড়ি। এরপর হাটি হাটি পা পা করে দীর্ঘ ৩৬ বছরের শ্রমিক রাজনীতির পথে অবিচল ছিলেন তিনি। এই দীর্ঘ সময়ে তিনি নৈতিকতা, দায়িত্ববোধ ও সিনিয়রদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে রাজনীতি করে গেছেন।
বিএনপি’র একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে দেবব্রত দাস বকুল আওয়ামী লীগ সরকারের ১৭ বছরের শাসনামলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হন। মোট ১৯টি রাজনৈতিক মামলার আসামি হন তিনি। এর মধ্যে নয়বার গ্রেফতার হয়ে তিনি ৩৯৫ দিন কারাবরণ করেন, যার মধ্যে ১৩ দিন ছিলেন রিমান্ডে। সেই সময়ের শারীরিক নির্যাতনের চিহ্ন আজও তার শরীরে বিদ্যমান।
উল্লেখযোগ্য এক ঘটনায়, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের পর ময়মনসিংহে ১৪৪ ধারা জারি থাকলেও, সেই দিন আবু ওয়াহাব আকন্দের নেতৃত্বে বিএনপি, যুবদল ও শ্রমিক দলের নেতাকর্মীরা প্রতিবাদে মিছিল করেন। সেই মিছিল থেকেই তাকে গ্রেফতার করেন তৎকালীন ওসি মাহমুদুল হাসান। তার ওপর চালানো হয় পাশবিক নির্যাতন, যা তার জীবনকে গভীরভাবে আলোড়িত করে।
২০১৯ সালে ময়মনসিংহ জেলা অটোর টেম্পু শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আমিনুল হক শামীম, মেয়র ইকরামুল হক টিটুসহ দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকলেও, সেই সভায় মঞ্চে বঙ্গবন্ধু শেখ হাসিনার ছবি টানাতে বাধা দেন দেবব্রত দাস দুকুল। শুধুমাত্র বিএনপি করার অপরাধেই, পরে ভোটে জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও তাকে ফেল দেখানো হয়।
নির্যাতনের বিরুদ্ধে মাথা নত না করে, নিঃস্বার্থভাবে তিনি শ্রমিক দলের সঙ্গে থেকে কাজ করে গেছেন। ১৯৮৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত শুধুই দিয়ে গেছেন দলকে। এখন প্রশ্ন উঠছে—এই নিবেদিত প্রাণ নেতাকে দল কতটুকু মূল্যায়ন করবে? হাইব্রিড অনুপ্রবেশকারী ও দলবাজ ব্যবসায়ীদের ভিড়ে তার মতো আসল কর্মী যেন হারিয়ে না যান, এটাই এখন শ্রমিক দলের সাধারণ কর্মীদের আকাঙ্ক্ষা।
দলের প্রতি তার ভালোবাসা, নিষ্ঠা ও আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানিয়ে দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে একটি মর্যাদাপূর্ণ পদে দেখতে চান। নেতাকর্মীদের দাবি—এই ত্যাগী নেতার প্রাপ্য সম্মান যেন তাকে দেওয়া হয়।