
নির্বাচন ছাড়া কমিটি ঘোষণায় সাংবাদিকদের প্রতিবাদ, হাইকোর্টের নির্দেশে জবাব দিতে হবে সংশ্লিষ্টদের
ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাবের বর্তমান অনির্বাচিত নির্বাহী কমিটিকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না—এই মর্মে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন রুল জারি করেছে।
হাইকোর্টের আদেশ
৯ মার্চ ২০২৫, বিচারপতি মোহাম্মদ আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি কে এম রাশেদুজ্জামান-এর বেঞ্চ এই রুল জারি করেন। ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাব নির্বাচন-২০২৫-এর ক্রীড়া সম্পাদক প্রার্থী এম এ মোতালেবের দায়ের করা রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে এই আদেশ দেওয়া হয়।
যাদের বিরুদ্ধে রুল জারি
হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী, আগামী ২৩ মার্চ ২০২৫-এর মধ্যে নিম্নলিখিত ব্যক্তিদের জবাব দিতে বলা হয়েছে—
১. তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব
2. ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাবের সভাপতি
3. ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মফিদুল আলম
4. সাবেক সাধারণ সম্পাদক অমিত রায়
5. সাবেক সহ-সভাপতি মোশাররফ হোসেন
6. ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাব নির্বাচন-২০২৫-এর সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সাইফুল ইসলাম
রিটকারীর পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান ও সিনিয়র অ্যাডভোকেট আব্দুল হাই।
নির্বাচন ছাড়াই কমিটি ঘোষণা, সাংবাদিকদের প্রতিবাদ ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ
২০২৫ সালের ২ জানুয়ারি, কোনো ধরনের নির্বাচন বা ভোটগ্রহণ ছাড়াই সাবেক সহ-সভাপতি মোশাররফ হোসেন হঠাৎ করেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নতুন কমিটি ঘোষণা করেন।
এই ঘোষণার প্রতিবাদে, একই দিন দুপুর ১২:৩০ থেকে ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাব সংস্কার কমিটির আহ্বানে শতাধিক সাংবাদিক ৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
প্রতিবাদে নেতৃত্ব দেন
- আহ্বায়ক মোঃ শামসুল আলম খান
- মূখ্য সংগঠক শিবলী সাদিক খান
যুগ্ম আহ্বায়ক জহর লাল দে, আরিফ রেওগীর, আলমগীর কবির উজ্জ্বল, সুমন ভট্টাচার্য
- সাদেকুর রহমান,গোলাম কিবরিয়া পলাশ, আশিকুর রহমান মিঠু, সেলিম আকন্দ, সারোয়ার জাহান জুয়েল মোঃ বিল্লাল হোসেন মানিক সহ আরও অনেকে
তাদের দাবি ছিল:
✅ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে কমিটি গঠন করতে হবে
✅ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচনী উপকমিটির মাধ্যমে নির্বাচন দিতে হবে
✅ প্রেস ক্লাব সংস্কার ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে
প্রতিবাদের সময় জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, যৌথ বাহিনী ও পুলিশের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। সহকারী জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (ADM)-এর নেতৃত্বে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু সেই আশ্বাস উপেক্ষা করেই ৫ জানুয়ারি ২০২৫ নতুন কমিটি দায়িত্ব গ্রহণ করে। এরপর থেকেই প্রেস ক্লাবের অভ্যন্তরে দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছায়।
হাইকোর্টের আদেশের পরবর্তী ধাপ
এই রুল জারির ফলে ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাবের বর্তমান কমিটির বৈধতা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। আদালতের নির্দেশ অনুসারে ২৩ মার্চের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের লিখিত জবাব দিতে হবে।
যদি হাইকোর্ট বর্তমান কমিটিকে অবৈধ ঘোষণা করে, তাহলে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এর ফলে ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাবের নেতৃত্বে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
সাংবাদিকদের একাংশ মনে করছেন, গণতান্ত্রিক নিয়ম মেনে নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে প্রেস ক্লাব পরিচালনা করা উচিত। তবে বর্তমান কমিটির পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সাংবাদিকদের দাবি, প্রশাসনের ভূমিকা ও ভবিষ্যৎ করণীয়
সাংবাদিক নেতারা বলছেন, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতৃত্ব ছাড়া প্রেস ক্লাব পরিচালিত হতে পারে না। তারা আশা করছেন, আদালতের রায় স্বচ্ছ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আনবে।
এদিকে, জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষ প্রেস ক্লাবের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে প্রশাসন যদি হাইকোর্টের আদেশ বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা না নেয়, তাহলে আবারও সাংবাদিকদের আন্দোলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
এখন দেখার বিষয়, আদালতের রায়ের মাধ্যমে ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাবের নেতৃত্ব কীভাবে পরিবর্তন হয় এবং পরবর্তী নির্বাচন কীভাবে অনুষ্ঠিত হয়।