
মুক্তাগাছায় সারাফত আলীর ‘চাঁদাবাজার’ এখনো জমজমাট!
আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপি-যুবদল—রাজনৈতিক রং বদলে চাঁদাবাজির সাম্রাজ্য ধরে রেখেছে সারাফত আলী!
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় পরিবহন খাতে চাঁদাবাজির রাজত্ব যেন শেষই হচ্ছে না। একসময় আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারকারী মোহাম্মদ সারাফত আলী (পিতা: নইমুদ্দিন, ঠিকানা: পাড়া টুঙ্গি, দলুয়া বিল) এখন দল বদল করে বিএনপি ও যুবদলের কিছু অসাধু নেতাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আবারও চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, “গিরগিটির মতো রং বদলানো” এই চাঁদাবাজ কখনো আওয়ামী লীগের, কখনো বিএনপির ছত্রছায়ায় থেকে পরিবহন শ্রমিকদের রক্ত চুষে খাচ্ছে। তার নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী পরিবহন মালিকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা চাঁদা তুলছে, যা পুরো মুক্তাগাছার জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।
একসময় আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায়, এখন বিএনপি-যুবদলের অসাধু নেতাদের সঙ্গে আঁতাত!
সারাফত আলী একসময় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা বিল্লাল হোসেন সরকার, ইদু, যদু, আরব আলী, মনিরদের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিল। তখন সে অবৈধভাবে অর্থ আদায়, শ্রমিকদের হয়রানি এবং পরিবহন মালিকদের জিম্মি করে রেখেছিল। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর সে কৌশল বদলেছে।
নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে টিকে থাকার জন্য সে বিএনপি ও যুবদলের কিছু অসাধু নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। এতে তার চাঁদাবাজির অবৈধ ব্যবসা আরও জোরদার হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পরিবহন শ্রমিক অভিযোগ করেছেন, আগের মতোই প্রতিদিন গাড়ি প্রতি নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা দিতে বাধ্য করা হচ্ছে।
পরিবহন খাতজুড়ে আতঙ্ক, সাধারণ শ্রমিক-মালিকরা দিশেহারা
মুক্তাগাছার পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, সারাফত আলীর দৌরাত্ম্যে তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। তার চাঁদাবাজ চক্র প্রতিনিয়ত শ্রমিকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে, চাঁদা না দিলে গাড়ি চলতে দেওয়া হয় না। অনেক শ্রমিককে মারধরের ঘটনাও ঘটেছে।
এক পরিবহন চালক বলেন, “দিন শেষে যা আয় করি, তার বড় একটা অংশ চাঁদাবাজদের দিতে হয়। না দিলে আমাদের গাড়ি আটকে দেয়, মারধর করে। আমরা এখন কোথায় যাব?”
প্রশাসনের নিরব ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন!
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের নাকের ডগায় এই চাঁদাবাজি চললেও এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণেই সারাফত আলী বারবার রঙ বদলে টিকে যাচ্ছে।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “সরকার বদলায়, কিন্তু চাঁদাবাজরা বদলায় না। তারা শুধু দলের রং বদলায়। প্রশাসন চাইলে একদিনেই এদের ঠেকানো সম্ভব, কিন্তু তারা কেন চুপ?”
জনদাবি: সারাফত আলীর চাঁদাবাজ চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন!
মুক্তাগাছার সাধারণ জনগণ, পরিবহন শ্রমিক ও মালিকরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন, দ্রুত সারাফত আলী ও তার চাঁদাবাজ চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে মুক্তাগাছার পরিবহন সেক্টর চাঁদাবাজদের দখলে থেকে যাবে, যা জনজীবনকে আরও বিপর্যস্ত করে তুলবে।
প্রশ্ন হলো, প্রশাসন কি কার্যকর ব্যবস্থা নেবে, নাকি রাজনৈতিক আশ্রয়ে চাঁদাবাজরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে? মুক্তাগাছার মানুষ এখন সেই উত্তর খুঁজছে।