ক্রাইম রিপোর্টার মোঃ বিল্লাল হোসেন মানিক
যৌনকর্মীদের অধিকার আদায় ও জীবনমান উন্নয়ন নিয়ে ময়মনসিংহসহ সারাদেশে নতুন করে আলোচনার ঝড় উঠেছে। বিশেষ করে বিশ্ব বাংলা ভিশন সংবাদ পত্রিকার ধারাবাহিক প্রতিবেদন যৌনকর্মীদের বাস্তব সমস্যা, স্বাস্থ্যঝুঁকি, অধিকার বঞ্চনা ও সামাজিক অবস্থা জনসম্মুখে তুলে ধরে জাতীয়ভাবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে জায়গা করে নিয়েছে।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে ঢাকার জাতীয় দৈনিক সমকাল এবং অপরাজেয় বাংলাদেশ যৌথভাবে একটি গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে, যেখানে যৌনকর্মীদের জীবনমান উন্নয়নে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। সেখানে বলা হয়, যৌনকর্মীরা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকলেও তাদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্র ও সমাজের দায়িত্ব।
এর আগে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক সরাসরি পতিতালয় পরিদর্শন করে যৌনকর্মীদের জীবনযাত্রা ও স্বাস্থ্যঝুঁকি প্রত্যক্ষ করেন। এটিকে স্থানীয় সচেতন মহল ইতিহাসের একটি মাইলফলক হিসেবে গণ্য করেছেন।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে—
কিছুদিন আগে বিশ্ব বাংলা ভিশনের এক প্রতিবেদন প্রকাশের পর রূপা নামের এক সর্দারনী উদ্যোগ নিয়ে নিজের ঘরে থাকা যৌনকর্মীদের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও মাসিক সঞ্চয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করেন এবং এ বিষয়ে একটি সরকারি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরও করেন। এ ঘটনাকে মানবিক উদ্যোগ হিসেবে প্রশংসা করেছে সচেতন সমাজ।
তবে সর্বশেষ অনুসন্ধানে আরও উদ্বেগজনক তথ্য পাওয়া গেছে। ময়মনসিংহ পতিতালয়ের ভেতরে ফরিদা, জহুরা সহ কয়েকজন সর্দারনী মাত্র ৮ থেকে ১০ বছর বয়সী কিশোরীদের আটকে রেখে জোরপূর্বক দেহব্যবসা চালাচ্ছেন। দালালচক্র অল্প টাকার লোভ দেখিয়ে এসব কিশোরীদের নিয়ে আসে এবং পরে সর্দারনীদের কাছে বিক্রি করে দেয়। অভিযোগ রয়েছে, এ প্রক্রিয়ায় প্রতিটি কিশোরীকে ঘিরে কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছে অসাধু পুলিশ ও নেত্রীবৃন্দ।
এগুলোর ক্ষেত্রে না আছে ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক অনুমোদিত এফিডেভিট, না আছে কিশোরীদের সম্মতিপত্র। ফলে এটি স্পষ্টভাবে মানবপাচার, জবরদস্তি ও শিশু নির্যাতনের শামিল।
যৌনকর্মীরা তাদের প্রথম চাহিদা হিসেবে দাবি করেছেন—
সচেতন মহল মনে করছে, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের বিশেষ ভিজিলেন্স টিমের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে কিশোরীদের উদ্ধার করা প্রয়োজন। একইসাথে পতিতা পল্লীতে সক্রিয় দালাল, চাঁদাবাজ, সর্দারনী ও দাদন ব্যবসায়ী চক্রকে আইনের আওতায় আনতে হবে।
কারণ, বর্তমান সময়ে পতিতালয়ের যৌনকর্মী ও সাধারণ মানুষ উভয়েই কোতোয়ালি থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। তাই সঠিক সময়ে প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপই এই অমানবিক পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
প্রশ্ন এখন একটাই—যৌনকর্মীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন যখন সারাদেশে আলোচিত, তখন কিশোরী নির্যাতনকারী কথিত নেত্রী ও মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ কোথায়?