ভালুকায় শত্রুতায় শতাধিক চারা গাছ কেটে ফেলল প্রতিপক্ষ
স্টাফ রিপোর্টার:
ময়মনসিংহের ভালুকায় শত্রুতার জেরে শতাধিক চারা গাছ কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন পলিন, আমান উল্লাহ খান ও মনোয়ারা খাতুনসহ আরও কয়েকজন। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছে। ঘটনার পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে, তবে পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে বলে জানিয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে উপজেলার ভান্ডাব দায়ড়াপাড়া এলাকায়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলমান বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষরা পরিকল্পিতভাবে এ ভাঙচুর চালায়। ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ করেছে, তাদের জমিতে রোপণ করা শতাধিক ফলজ ও বনজ চারা গাছ একসাথে কেটে ফেলা হয়। গাছগুলো ছিল দুই থেকে তিন বছর বয়সী, যা তাদের ভবিষ্যতের আর্থিক ভরসা হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছিল।
ভুক্তভোগী আব্দুল হামিদ জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে ওই জমিতে চারা গাছ লাগিয়ে আসছিলেন। মামলাজনিত বিরোধ সত্ত্বেও তিনি ভেবেছিলেন, পরিবেশ ও পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তার জন্য গাছগুলো একদিন বড় হয়ে কাজে লাগবে। কিন্তু মঙ্গলবার ৯/৯/২৫ তারিখ সকালে তার লাগানো গাছগুলো সকালে আনুমানিক ৬:৩০ এর দিকে কেটে ফেলা হয়েছে। যেগুলোর বাজারমূল্য প্রায় দুই লাখ টাকা। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “শত্রুতা করে মানুষকে এভাবে সর্বনাশ করা যায় না। আমাদের দুই লাখ টাকার মতো গাছ একদিনে শেষ করে দিলো। এখন আমরা নিঃস্ব হয়ে গেলাম।”
ঘটনার পর ভুক্তভোগী পরিবার প্রতিকার চাইতে গেলে প্রতিপক্ষরা তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। আব্দুল হামিদের পরিবার দাবি করেছে, প্রতিবাদ জানাতে গেলে অভিযুক্তরা তাদের শারীরিকভাবে আক্রমণ করে এবং মারধরের শিকার হতে হয়। এতে পরিবারের কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে স্থানীয়রা জানায়, আব্দুল হামিদ ও অভিযুক্তদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। মামলাও চলমান ছিলো আদালতে। গ্রামবাসী একাধিকবার সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করলেও স্থায়ী কোনো সমাধান আসেনি। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিশোধ নিতে গিয়ে প্রতিপক্ষরা এ ধরনের ক্ষতিকর কাজ করেছে বলে স্থানীয়দের ধারণা। তারা বলেন, গাছ কেটে ফেলা শুধু একটি পরিবারের ক্ষতি নয়, এটি পরিবেশেরও ক্ষতি। গ্রামের একজন প্রবীণ বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “গাছ মানে অক্সিজেন, মানে ভবিষ্যৎ। শতাধিক গাছ কেটে ফেলা মানে শুধু হামিদের ক্ষতি নয়, আমাদের সবার ক্ষতি। এভাবে পরিবেশ নষ্ট করা উচিত হয়নি।”
এদিকে চারা গাছ কেটে ফেলার ঘটনায় গ্রামে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, এটি সরাসরি শত্রুতার বহিঃপ্রকাশ। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, জমির বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে দুর্বল করার কৌশল হিসেবেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে যেভাবেই হোক না কেন, গাছ কেটে ফেলা একটি অপরাধ এবং এর মাধ্যমে ভুক্তভোগী পরিবারের বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে তারা মত প্রকাশ করেছেন।
ভালুকা মডেল থানায় এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন আব্দুল হামিদ। থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, অভিযোগ হাতে পেয়েছেন এবং ঘটনাটি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, “আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি। গাছ কেটে ফেলার মতো ঘটনা কারো জন্য শুভ নয়। ভুক্তভোগী পরিবার যে অভিযোগ করেছে তা তদন্ত সাপেক্ষে প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে এমন আশ্বাস পেলেও ভুক্তভোগী পরিবার এখনো আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। তাদের আশঙ্কা, প্রতিপক্ষের প্রভাবশালী অবস্থানের কারণে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যেতে পারে। তাই তারা দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার দাবি করেছেন।