১০ কোটি অবৈধ সম্পদ ও ৫০০ কোটি টাকার লেনদেন সন্দেহে শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আলোচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব অ্যাডভোকেট শামীম ওসমান, তার স্ত্রী সালমা ওসমান লিপি এবং শ্যালক তানভীর আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একটি বড় পরিসরের দুর্নীতির মামলায় অভিযোগ গঠন করেছে।
দুদকের অভিযোগে বলা হয়েছে, অভিযুক্তরা দেশের বাইরে থেকে প্রাপ্ত ২৫.১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১৯৩ কোটি টাকা) গোপনে পাচার করেছেন এবং সেই অর্থ দেশে ফেরত না এনে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অন্যত্র স্থানান্তর করেছেন। একই সঙ্গে শামীম ওসমান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ১০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ৫০০ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেন এরও অভিযোগ উঠেছে।
দুদক সূত্র জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ১৩ কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দ করা হয়েছে এবং ২৯টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে, যেগুলোর সঙ্গে অবৈধ আয়ের সংযোগ রয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
শুধু তাই নয়, দুদক শামীম ওসমান, তার স্ত্রী ও সন্তানদের তলব করেছে। পাশাপাশি শ্যালক তানভীর আহমেদের ভূমিকা নিয়েও তদন্ত চলছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে উঠে এসেছে, ভূমি দখল, সরকারি ঠিকাদারি সিন্ডিকেট, চাঁদাবাজি, পরিবহন খাতে একচ্ছত্র আধিপত্য, এমনকি নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের মতো সামাজিক প্রতিষ্ঠান দখলের মতো ঘটনাও।
উল্লেখযোগ্য হলো, ২০১৪ সালে সংসদ নির্বাচনের আগে হলফনামায় শামীম ওসমানের বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছিল মাত্র ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা, আর বর্তমানে তার পরিবারের বার্ষিক আয় ও সম্পদের পরিমাণ লাফিয়ে বেড়ে ৭৯ লাখ টাকার বেশি হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে একাধিক গাড়ি (দুটি ল্যান্ডক্রুজার), ১৩টি জাহাজ, বিভিন্ন ধরনের জমি, ভবিষ্যৎ আয়, এবং অন্যান্য ব্যবসা।
শুধু সম্পদের হিসাব নয়, টেন্ডার সিন্ডিকেট, ভূমি উন্নয়ন প্রকল্পে নিয়ন্ত্রণ, জ্বালানি আমদানির অনুমোদন বাণিজ্যসহ বহুমাত্রিক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে এই প্রভাবশালী রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনেও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা, এই মামলার ফলাফল রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।
এদিকে শামীম ওসমান এখনো গণমাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য দেননি। তবে তার ঘনিষ্ঠরা বলছেন, এই মামলা "রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অনুপ্রাণিত" এবং "চক্রান্তমূলকভাবে" দায়ের করা হয়েছে।
দুদক সূত্রে জানানো হয়েছে, তদন্তের পর চূড়ান্ত চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হবে। এখন পর্যন্ত মামলাটি দুদকের প্রধান কার্যালয়ের বিশেষ ইউনিট পর্যবেক্ষণ করছে এবং তদন্ত তদারকি করছে একজন পরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তা।
সারসংক্ষেপে:
প্রতিবেদন: কাগজের আলো ডেস্ক
প্রকাশকাল: ১৫ জুলাই ২০২৫