নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চরম দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা: চিকিৎসা সেবা বিপর্যস্ত

নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চরম দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা: চিকিৎসা সেবা বিপর্যস্ত
ক্রাইম রিপোর্টার: মোঃ বিল্লাল হোসেন মানিক
কাগজের আলো
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। বহির্বিভাগে এক সপ্তাহ ধরে কোনো চিকিৎসক নেই। রোগীরা বিনা চিকিৎসায় ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন, আর দালাল ও দুর্নীতির শিকার হয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেও কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না।
চিকিৎসকের সংকট—রোগীরা দিশেহারা
এই ৩১ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ রোগী বহির্বিভাগে এবং ২০০ রোগী জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে বহির্বিভাগ কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে মাত্র একজন ভেষজ ও মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট দিয়ে সাময়িক চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থাকা ৭টি জুনিয়র কনসালট্যান্ট ও ১৩টি মেডিক্যাল অফিসারের পদ শূন্য রয়েছে। অর্থোপেডিক বিভাগের কনসালট্যান্টকে সংযুক্ত করা হয়েছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। মেডিসিন ও শিশু বিভাগের চিকিৎসকরাও অনুপস্থিত। এনেস্থেসিয়া কনসালট্যান্ট না থাকায় প্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
অ্যাম্বুলেন্স ও অবকাঠামোর করুণ দশা
এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪টি সরকারি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও ৩টি দীর্ঘদিন ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে। একমাত্র সচল অ্যাম্বুলেন্সটি প্রায়ই নষ্ট হয়ে যায়, ফলে রোগীদের মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
হাসপাতাল ভবনেও রয়েছে নানা সমস্যা। প্রসূতি ওয়ার্ডের শৌচাগার ব্যবহারের অনুপযোগী। বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহেও অনিয়ম দেখা যাচ্ছে। অনেক সময় রোগীদের বাইরে থেকে পানীয় জল সংগ্রহ করতে হয়।
দালালদের দৌরাত্ম্য ও ঘুষ বাণিজ্য
চিকিৎসা পেতে আসা রোগীরা শুধু চিকিৎসক সংকটেই নয়, দালালদের দৌরাত্ম্যেও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন। হাসপাতালে বিনামূল্যে দেওয়ার কথা থাকলেও, দালাল চক্রের মাধ্যমে রোগীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
সূত্র জানায়, এই চক্রের মূল হোতা হলেন এক প্রভাবশালী কর্মকর্তা, যিনি বিআরটিএ-এর মতো বিভিন্ন দপ্তরের দালালদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে ঘুষ বাণিজ্য পরিচালনা করেন। তার অফিস সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকে, যেখানে স্বাস্থ্যসেবার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়।
সচেতন মহলের দাবি ও রোগীদের আকুতি
গত ২৪ অক্টোবর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো এক চিঠিতে নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকটের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এদিকে, স্থানীয় জনগণ দ্রুত চিকিৎসক নিয়োগ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নের দাবি জানিয়েছেন। এক রোগীর স্বজন জানান, “আমরা প্রায় ২০ কিলোমিটার দূর থেকে এসেছি, কিন্তু ডাক্তার না থাকায় ফিরে যেতে হচ্ছে। আমাদের মতো আরও অনেকেই বিনা চিকিৎসায় ফিরে গেছেন।”
স্থানীয়দের দাবি, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়মিত পরিদর্শন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা ও দ্রুত চিকিৎসক নিয়োগের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমাতে হবে। তারা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।